ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের জন্য পরিবার ও সমাজ ব্যবস্থা দায়ী : মামুন মাহফুজ

অনলাইন ডেস্ক : 

আছিয়াকে নিয়ে কোন কথা লিখিনি বলিনি।

কেন সে কারণটা বলতেও আমার বুক কাঁপে।
এটা একটা ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স। এর জন্য সরকার নয় পরিবার দায়ী। তবে সবচেয়ে বেশি দায়ী সমাজ ব্যবস্থা।
এই সমাজ ব্যবস্থা কাউকে ধনী বানিয়েছে কাউকে দরিদ্র বানিয়েছে কাউকে ক্ষমতাবান বানিয়েছে আর কাউকে অসহায় বানিয়েছে।
ধর্ষণের প্রধান কারণ এই বৈষম্য। যার শক্তি আছে সে তার চেয়ে কম শক্তিশালী বা দুর্বলের ওপর যেকোনো ধরনের উপায়ে নিপীড়ন করে।
ধর্ষণ যেকোনো পুরুষ করতে পারে। ধর্ষণ করার ক্ষেত্রে একটা পুরুষ চিন্তা করে না যাকে ধর্ষণ করবে সে শিশু নাকি যুবতী নারী! বরং সে চিন্তা করে এর সঙ্গে কিছু করলে আমার কিছু হবে কিনা যখন সে বুঝতে পারে যে এর সঙ্গে খারাপ কিছু করলেও আমার কিছু হবে না তখনই সে খারাপ কিছু করে।
কখন ধর্ষক এটা ভাবে?
যখন প্রতিপক্ষ দুর্বল হয় বিশেষ করে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল শ্রেণীর উপর মানুষ অত্যাচার নিপীড়ন ধর্ষণ ইত্যাদি বেশি চালায়।
এসব তাত্ত্বিক কথা বলে আর লাভ নেই, মানুষ কোন সমস্যার মূল উপড়ে ফেলতে রাজি নয়, তাৎক্ষণিক সমাধান চায়।
আছিয়ার উপর এমন নিষ্ঠুর ঘটনা যে ঘটতে পারে এমন আশঙ্কা ওই পশুটার কাছ থেকে আগেই পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু আছিয়ার বোন এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনি তার দারিদ্র্যের কারণে। সামাজিক কারণে। আছিয়ার বাবা মার কারণে।
আছিয়ার বোন যখন তার শশুরের কাছ থেকে কুদৃষ্টির আভাস পেলেন তখনই তার এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তা নেওয়া তার পক্ষে সম্ভব ছিল না কারণ আছিয়া সম্পূর্ণ স্বামী নির্ভর এবং তার বাবা মা অত্যন্ত দরিদ্র। এইচ অসহায়ত্ব এরকম অসহায়ত্ব নারীদেরকে ধর্ষিত হতে বাধ্য করে নিপীড়িত হতে বাধ্য করে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করে।
শশুরের কু মতলব টের পেয়ে আছিয়া স্বামী-সংসার ছেড়ে বাপের বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা আছিয়ার বাবা-মায়ের জন্য অভিশাপ আর সমাজের জন্য কলঙ্ক। কোন মেয়ে বাপের বাড়ি ফিরে গেলে সেইটা মানুষের কাছে সবচেয়ে বড় অপরাধ বড় লজ্জার। কার কতটুকু দোষ তার বিচার ছাড়াই মানুষ রায় দিয়ে দেয়।
ঘটনার দিন আসিয়া ও তার স্বামী কোথায় ঘুমিয়ে ছিল আর তার ছোট বোনটি কোথায় ঘুমিয়ে ছিল সেটি আমি আজ পর্যন্ত পরিষ্কার হতে পারিনি।
নিঃসন্দেহে বোন তাদের স্বামী স্ত্রীর মাঝখানে আছিয়াকে জায়গা দেননি। এমনকি আছিয়া কে আলাদা থাকতে দিলেও সেখানে তার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা কিংবা চিন্তা করা বোনের পক্ষে সম্ভব হয়নি।
আছিয়ার বোন আছিয়ার সর্বনাশ ঠেকাতে পারেনি। কিন্তু শ্বশুরের মতলব থেকে কুদৃষ্টি থেকে সে নিজেকে রক্ষা করেছে। সেজন্য আছি আর বোনকে স্যালুট অন্তত একজন নারী নিজেকে হেফাজত করতে পেরেছে।
কিন্তু একই স্থানে যদি আছিয়ার বোন না হয়ে আছিয়ার ভাই হত দৃশ্যপট টা কী হতো?
ভাই তার নিজের জীবন বিপন্ন করে হলেও বোনকে রক্ষা করত বোনের গায়ে একটা আঁচর লাগতে দিত না। একটা মেয়ে তার স্বামী তার বাবার চেয়েও তার ভাইকে বেশি ভালোবাসে ঠিক এই কারণে। একটা মেয়ে তার স্বামীর কাছে তার বাবার কাছেও যতটা নিরাপদ নয় তার চেয়েও বেশি নিরাপদ বোধ করে তার ভাইয়ের কাছে।
আজ থেকে কান খুলে শুনে রাখেন বোনকে শ্বশুরবাড়ি পাঠানোর সময় আরেকটা বোনকে দিয়ে পাঠাবেন না, ভাইকে পাঠাবেন। ভাই যদি ছোট হয় সে তার বোনকে আগলে রাখার সমস্ত চেষ্টা করে এবং সেই ক্যাপাসিটি আল্লাহ তাকে দিয়ে দেন।
আর এ কারণেই পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে পুরুষ হচ্ছে নারীর দায়িত্বশীল, রক্ষা কর্তা, অভিভাবক। আর এ কারণেই নারীদের দূরযাত্রায় হজ যাত্রায় একজন পুরুষ মাহরেম লাগে।
আমি আমার মেয়েকে স্কুলে পাঠাবার সময় কিংবা বাসায় একলা কখনো রেখে যাওয়ার ক্ষেত্রে সব সময় তার সাথে তার ছোট ভাইকে রাখি। সে যদিও ছোট কিন্তু আমরা তার দায়িত্বশীলতা এই ছোটবেলাতেও যতটুকু দেখেছি তা সত্যি মুগ্ধ করার মত। আলহামদুলিল্লাহ। ভাই তার বোনের সঙ্গে এটা নিয়ে ওটা নিয়ে ২৪ ঘন্টা লড়াই করে কিন্তু বোনের হেফাজতের ক্ষেত্রে সে এক বিন্দু অবহেলা করে না, ছাড় দেয় না।
আমি নিশ্চিত আছিয়ার ক্ষেত্রে সেখানে যদি আছিয়ার বোন না হয়ে ভাই হত ঘটনা ঘটতো পুরোটাই উল্টো।

লেখক:
মামুন মাহফুজ
সাংবাদিক

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 comments: