বিচারের পরেই অন্য কাজ : কক্সবাজারে ডা. শফিকুর রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা আমাদের এ দেশে মেজরিটি মাইনরিটি একেবারেই মানিনা। বাংলাদেশে যারাই জন্মগ্রহণ করেছে তারা এদেশের মর্যাদাবান গর্বিত নাগরিক। ইসলাম কারো উপর জোর খাটানোর কোন অধিকার রাখেনা। অন্য ধর্মও কোনো ধর্মের উপর জোর খাটাতে পারবেনা যদি সেটি ধর্ম হয়ে থাকে। তিনি "আগে বিচার তারপর অন্য কাজ, ধর্ম যার যার, বাংলাদেশ" সবার বলে মন্তব্য করেন।
শনিবার (৮ ফ্রেব্রুয়ারি) কক্সবাজার সরকারি কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত জেলা জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শফিকুর রহমান আরো বলেন, সমাজের মধ্যে সংখ্যাগুরু এবং সংখ্যালঘু বলে যুদ্ধ লাগিয়ে রাখা হয়েছিলো। এখানে মেজরিটি মাইনরিটি বলে যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন ধরমের ভাই বোনদের নির্যাতন করা হয়েছে, তাদের সম্পদ গ্রাস করা হয়েছে, জায়গা জমি দখল করা হয়েছে, ইজ্জতের উপর হাত দেয়া হয়েছিলো, ক্ষেত্র বিশেষে তাদের ঘর বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আর দোষ দেয়া হয়েছে জামায়াতে ইসলামীর উপর।
ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি তিনি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, স্বাধীনতার ৫৪ বছরে কোথায় কোথায় জামায়াতের কর্মীরা এসব অপকর্ম করেছে, তা সুস্পষ্ট করে নাম ঠিকানা দিয়ে আমাদের সাহায্য করুন। আপনাদেরকে কথা দিচ্ছি, ন্যায় বিচার আমরা আপনাদের হাতে তুলে দেবো। আমরা নিশ্চিত এই অপকর্মের সাথে আমাদের সহকর্মীরা জড়িত নয়।
২৪ এর অভ্যুত্থানকারী প্রজন্মকে সম্মান জানিয়ে আমির বলেন, তোমাদের নেতৃত্বে আমরা ছিলাম। সাড়ে ১৫ বছর আমরা আমাদের নেতৃত্বে আন্দোলন করেছি। কিন্তু স্বৈরাচারের পতন ঘটাতে পারিনি। এটাই সত্য কথা। কিন্তু সাড়ে ১৫ বছরের ধারাবাহিকতায় তোমাদের নেতৃত্বে জাতি শেষ আঘাতটা ফ্যাসিজমের উপর দিয়েছিলো এবং জাতি সফল হয়েছিলো।
আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, অনেকে আবার নিজেরা কৃতিত্ব দাবী করে৷ আমি মাস্টারমাইন্ড, অমুক ভাই মাস্টারমাইন্ড তমুক নেতা মাস্টারমাইন্ড। মহা পরিকল্পনাকারী মহান রাব্বুল আলামিনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়েছে। এখানে কোনো মাস্টারমাইন্ড আমরা বিশ্বাস করিনা।
ডা. শফিক আরো বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ স্বাধীনতা অর্জন করার পর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। আমরাও সেভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবো, সেটা ছিলো আমাদের আশা। কিন্তু বাস্তবে সে আশা পূরণ হয়নি। যদি বলি একেবারেই পূরণ হয়নি, তাহলে কথাটা সত্য হবেনা। কিন্তু পূরণ হবার বিশাল প্রত্যাশা মানুষের ছিলো। একটা স্বাধীন বিচার ব্যাবস্থা আমরা এখনো পেলাম না।
নিজ দলের প্রতি অবিচারের প্রসঙ্গ টেনে জামায়াতের আমির বলেন, আইনের অঙ্গনে এসে যারা বেআইনী কর্মকাণ্ড করেছেন, প্রধান বিচারপতির দরজায় এসে লাথি দিয়েছিলো, আওয়ামীলীগ তাদের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বানিয়েছিলেন। এদের কাছ থেকে বিচার পাওয়া যাবেনা এটাই স্বাভাবিক। তাই অবিচারের শিকার হয়ে আমাদের ১১ জন কলিজার টুকরা শীর্ষ নেতা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। তাদেরকে ঠান্ডা মাথায় বিচারের নামে হত্যা করা হয়েছে। আমরা প্রতিশোধে বিশ্বাস করিনা, তবে আমরা অবশ্যই অপকর্মের বিচার চাই। আমাদের কথা স্পষ্ট। সবগুলো খুনের বিচার হতে হবে। বিশেষ করে ২৪ এর গণহত্যার বিচার অবশ্যই হতে হবে। আগে বিচার তারপর অন্য কাজ। এ বিচার না হলে শহীদের আত্মা কষ্ট পাবে। তিনি ছাত্র জনতাকে স্যালুট জানান। দীর্ঘদিন ধরে আটক জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তি দাবি করেন।
এছাড়া সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনেজির আহমেদের বক্তব্য প্রসঙ্গে পুলিশ বাহিনীকে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ”পুলিশ ভাইদের বলছি বেনেজিরের ফাঁদে পা দিবেন না।” তিনি কক্সবাজারে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা তুলে ধরেন।
তিনি আরাে বলেন, গত আওয়ামী আমলে সারাদেশে জামায়াতের সমস্ত অফিস বন্ধ, নিবন্ধন বাতিল, প্রতীক বাতিল করে সর্বশেষ দলকে নিষিদ্ধ করেছিল আল্লাহর অসীম রহমতে ৫ আগষ্ট তারাই নিষিদ্ধ হয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে হয়েছে। এটাই আল্লাহর বিচার।
দীর্ঘ ১৫ বছর পর বিশাল কর্মী সম্মেলনে একত্রিত হয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছেন জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। সম্মেলনের আগেরদিন রাত থেকে কুতুবদিয়া ও টেকনাফ থেকে প্রচুর নেতাকর্মী ঢুকে পড়ে সম্মেলন স্থলে। এ জনস্রোত লাখ ছাড়িয়ে যায়। কর্মী সম্মেলন ঘিরে রঙিন ব্যানার, ফেস্টুন, তোরণে সেজেছিল পুরো শহর। এ কর্মী সম্মেলনে জেলার ৪ সংসদীয় আসনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থীদের জয়ী করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়।
কক্সবাজার জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারীর সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ, সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মুহাম্মদ শাহজাহান, চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমীর সাবেক এমপি আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক আহসান উল্লাহ, ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সাবেক এমপি অধ্যাপক এনামুল হক মনজু ও কক্সবাজার জেলা জামায়াতের সাবেক আমীর মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান।
জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী জাহিদুর রহমানের পরিচালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন-হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি পরিমল কান্তি শীল, বান্দরবান জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক আবদুস সালাম, কক্সবাজার জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মুফতি হাবিবুল্লাহ, এডভোকেট ফরিদ উদ্দিন ফারুকী, জেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি এডভোকেট শাহজালাল চৌধুরী, সহকারী সেক্রেটারী অধ্যাপক আবু তাহের চৌধুরী, শামসুল আলম বাহাদুর, মাওলানা শফিউল হক জিহাদী, জামায়াত নেতা মুহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ, আল আমিন মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, কক্সবাজার শহর জামায়াতের আমীর আব্দুল্লাহ আল ফারুক, সাবেক ককসু ভিপি শহিদুল আলম বাহাদুর, ছাত্রনেতা আব্দুর রহিম নুরী, কক্সবাজার শহর জামায়াতের সেক্রেটারি রিয়াজ মুহাম্মদ শাকিল প্রমুখ।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 comments: