ইকুনোর কঠোর পরিশ্রম সমাজে সফল নারী নেত্রী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

সামাজিক বৈষম্য ও আত্মবিশ্বাস না হারিয়ে অসহায় ও দরিদ্র নারী সমাজের সম্মান ও সমান অধিকারের দিকে এগিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ হন রোকসানা আক্তার ইকুনো। সমাজের সাহায্য এবং নিজের সাহসের জোরে রোকসানা অপরাজিতা নারীকে এক নতুন দিশা দেখাতে নিরন্তর কাজ করে চলেছেন। একজন মহিলা, অপরাজিতার, কোন কিছুই তাকে বিরক্ত করতে পারেনি। কারণ শক্ত হওয়ার জন্য তার ছিল সীমাহীন চেষ্টা। ক্ষমতা, শিক্ষা, বিশ্বাস এবং ইচ্ছাশক্তির প্রচেষ্টা তার নিজস্ব গল্প তৈরি করেছে এবং সমাজের কাছ থেকে তার স্বামীর সমর্থন ও সমর্থনে তিনি এখন ক্ষমতা ও সম্মানের সাথে নারীদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, সমাজ পরিবর্তনে অবদান রাখছেন। তিনি বলেন, অপরাজিতা প্রকল্প সব সময় আমার সঙ্গে লেগে আছে, আমার সাহস, ইচ্ছাশক্তি, স্বামীর সমর্থন এবং কঠোর পরিশ্রম আমাকে অন্যতম ক্ষমতাশালী নারী নেত্রী হিসেবে স্থায়ী করে তুলেছে। পাশাপাশি সমাজের মানুষের মনোভাব আমাদের সমাজ পরিবর্তনে নারীদের সফল হওয়ার পথ প্রশস্ত করতে সহায়তা করছে। 

পরিচয় জন্ম ও শিক্ষা:

১৯৯৭ সালের ১ জানুয়ারি উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের নিদানিয়াপাড়ায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে সাধারণ নারী হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন রোকসানা আক্তার ইকুনো। বিয়ের পর নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও অপরাজিতা ২০১৯ সালে এই প্রকল্পে যোগ দিয়ে প্রকল্পের পক্ষ থেকে প্রদত্ত সবধরনের প্রশিক্ষণ ও কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে উক্ত বিষয়গুলোতে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সক্ষম হয় তিনি।

কার্যক্রম বাস্তবায়ন: 

অপরাজিতা ইকুনো অত্যন্ত দুর্গম পাহাড়ি এলাকার পালংখালী ইউনিয়নে অংশগ্রহণ ও বাস্তবায়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। মেয়ে হয়েও বাবার সঙ্গে নিয়মিত সালিশে যেতেন। তার স্বপ্ন ছিল একজন সমাজকর্মী হয়ে গ্রামের অসহায় মানুষের সেবা করা এবং একজন আত্মবিশ্বাসী সফল নারী নেত্রী হওয়া। তাই এলাকার হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে উন্নয়ন কর্মকা- বাস্তবায়নের সহায়তায় তিনি সামাজিক-রাজনৈতিক অর্থনৈতিক কর্মকা- করে এলাকার অসহায় দরিদ্র মানুষের প্রিয় ব্যক্তিতে পরিণত হন এবং এগিয়ে যাওয়ার জন্য অসহায় স্বামী হারানো বিধবাদের তালিকা তৈরি করেন এবং উপজেলা সমাজকল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দশজনকে বিধবা ভাতা পেতে সহায়তা করেন। এলাকার প্রায় ৫০ জন দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত ছেলে-মেয়ে প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করেন। তিনি তাদের স্কুলে ভর্তি দেখাতে সাহায্য করতেন। 

তিনি বাল্যবিবাহ বন্ধ, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে আটটি ট্রায়ালে অংশ নিয়ে সফলতার সাথে সমস্যা সমাধানে মতামত ও প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেন। স্থানীয় প্রশাসনের সকল ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়নকে সমর্থন করে তিনি সর্বদা লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণে অবদান রেখেছেন। জরুরি সেবা নিশ্চিত করতে ২৮০ জন ৯৯৯ জন ও ১০৯  জন নারীকে নির্যাতন বা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সচেতন করতে পেরেছেন। বর্তমানে তিনি ইউনিয়ন পরিষদের নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সদস্য। ইকুনো ইউনিয়ন ও উপজেলা অপরাজিতা নেটওয়ার্কের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। 

তিনি উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে একজন আদর্শ কৃষক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে অপরাজিতা প্রকল্পের বিভিন্ন কমিটি ও কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে সমাজ পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে যান। তার বাস্তব অভিজ্ঞতা ও সহায়তায় তিনি সমাজে পরিবর্তন এনেছিলেন। তিনি নারীর সামাজিক মর্যাদা ও অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করেন। তার ইচ্ছাশক্তি ও সাহসের মাধ্যমে তিনি নারীর ক্ষমতা ও মর্যাদার লড়াইয়ে অগ্রগতি অর্জন করেছিলেন। যেখানে নারীরা বঞ্চিত ছিল এবং তার কার্যকলাপ একটি সুস্থ ও সক্রিয় সমাজ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল। 

পরিশেষে বলা যায়, প্রত্যন্ত গৃহবধু থেকে পালংখালী ইউনিয়নের অন্যতম অপরাজেয় মানুষ হিসেবে সমাজে অবদান রেখে চলেছেন ইকুনো। আর অপরাজিতা এসে জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে আত্মনিয়ন্ত্রণ ও ইতিবাচক চিন্তা ভাবনার কারণে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে প্রমাণ করেছেন; আমরা ঘরের বাইরের নারী। তার সাফল্যের গল্প সমাজের অনেকের জন্য অনুপ্রেরণা ও অনুকরণীয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।



শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 comments: