নিজস্ব প্রতিবেদক :
একসময় নারীরা সমাজে চরম অবহেলিত, লাঞ্ছনা, বঞ্চনার পাত্র ছিল এবং শুধু সন্তান পালন ও গৃহস্থালি সংক্রান্ত কাজের জন্য বিবেচনা করা হতো। তবে এখন সমাজের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটেছে এবং বর্তমানে সমাজের মূলধারার আলোকশক্তি হিসাবে বিবেচনা করা হয় নারীদের। তারা রাজনীতি, ব্যবসা, খেলাধুলা, সামাজিক কর্মকান্ড, কর্মসংস্থান সৃষ্টি প্রভৃতি ক্ষেত্রে নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করছে। এটা সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের জন্য নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় ও ইতিবাচক পদক্ষেপ। তারা সমাজের সর্বত্র এবং প্রতিটি স্তরকে আলোকিত করছে। এমনি একজন নারী রাবেয়া বসরী। তিনি রামু উপজেলার ফাতেখারকুল ইউনিয়নের মধ্যম মেরুলিয়া গ্রামে ১৯৭২ সালের ১২ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কম শিক্ষিত হলেও শিক্ষার প্রতি প্রবল আগ্রহ থাকায় তার ছেলে মেয়েদেরকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। তিনি ২০০৩ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত ফতেহারকুল ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নির্বাচন করে আসছেন। শুধু ২০১৬ সালের নির্বাচন ছাড়া অন্যান্য ইউপি নির্বাচনগুলোতে তিনি বিজয় লাভ করেন। তিনি একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। তার সকল কাজে স্বামী ও পরিবার সহযোগিতা করে থাকেন। তারা যদি তাকে সহযোগিতা না করতেন তাহলে তিনি আজ এত দূর আসতে পারতেন না বলে তিনি জানান। তিনি ২০১২ সালে অপরাজিতা নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন প্রকল্পে যুক্ত হন। অপরাজিতার সাথে যুক্ত হওয়ার পর থেকে সভাসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। যা তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
কার্যক্রম: এইসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও সভা গ্রহণ করার ফলে রাবেয়া বসরীর মধ্যে কাজের দক্ষতা এবং পারফরম্যান্স আগের চেয়ে অনেক গুণ বেড়ে যায়। তিনি জনগনের সেবার জন্য নিজের দ্বার উমুক্ত করে দেন। মানুষের সুখে দুখে তিনি এগিয়ে যান। তিনি একটি সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তার সাধ্যমতো মানুষকে সহযোগিতা করে থাকেন। একজন উদার মনের মানুষ হিসেবে তিনি পর্যায়ক্রমে তিনটি এতিম মেয়ে শিশুকে নিজের বাড়িতে লালন পালন করে তাদেরকে লেখাপড়া করিয়ে মানুষের মত মানুষ করে সম্পূর্ণ নিজের খরচে বিয়ে দেন। বিয়ের পরও তিনি অন্যান্য অভিভাবকের মতো নিয়মিত খোঁজ খবর রাখেন তাদের। তার মানবিক এবং সমাজসেবা প্রবন্ধনে তার ব্যক্তিগত ভূমিকা অসীম হয়েছে। এক নতুন সমাজের নির্মাণে তার মৌলধর অসামান্য অবদান রয়েছে। একটি সমৃদ্ধ ও উন্নত সমাজ সৃষ্টির জন্য তার উদ্দীপনা স্বার্থের অগ্রায়ণ করে এবং তার পরিশ্রম এই লক্ষ্যে এগিয়ে চলছে। নারী নেত্রী রাবেয়া বসরী বাল্য বিবাহ বিষয়ে এলাকার সর্বসাধারণকে সচেতন করার মাধ্যমে ২০টি বাল্য বিবাহ বন্ধ করেন। সালিশী বৈঠকে বুঝাপড়ার মাধ্যমে ৯০টি পারিবারিক বিরোধ নিরসন করেন। তাছাড়া সরকারি সুযোগ-সুবিধার আওতায় এনে মাতৃত্বকালীন ৩০জন মহিলাকে মাতৃত্ব ভাতা প্রদান করেন, ২৫জন বিধবা মহিলাকে বিধবা ভাতা প্রদান করেন, ১০জনকে প্রতিবন্ধি ভাতা প্রদান করেন, সরকারি হট লিংক নাম্বার ৯৯৯ ও ১০৯ সেবা নিতে ১৫০ জনকে সচেতন করেন, ৩২জনকে বয়স্ক ভাতা প্রদান করেন, ৭৫জন ঝরে পড়া শিক্ষার্থীকে স্কুলমুখী করেন। এলাকার অবকাঠামগত উন্নয়নে ১২টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন। তার সফল জীবনযাত্রায় অনেক সাফল্যসমূহ লুকিয়ে আছে। সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখার স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ২০১৩ সালে উপজেলা পর্যায়ে জয়িতা পুরস্কার গ্রহণ করেন। পাশাপাশি তিনি রাজনৈতিক দলের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করায় রামু উপজেলার মহিলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা এবং জেলা মহিলা বিএনপির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি রামু উপজেলা মানবাধিকার কমিটির মহিলা সম্পাদিকা। স্থানীয় বিদ্যালয় ও কমিউনিটি ক্লিনিক (উত্তর ফতেখারকুল মুসলিমপাড়া) পরিচালনা কমিটির একজন অন্যতম সদস্য হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। এইসব পদবী ও মর্যাদা লাভ করার পেছনে অপরাজিতার অবদান অন্যান্য বলে স্বীকার করেন তিনি। আগামীতে তিনি রামু উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়বেন বলে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তিনি একজন সুপরিসর, প্রশিক্ষিত নারী যা সামাজিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আত্মপ্রকাশ করেছেন। তিনি সকল সময়ে সামাজিক কর্মসূচি এবং মানবিক সেবা করার জন্য নিজেকে সেভাবে প্রস্তুত রেখেছেন। রাবেয়া বসরীর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় এবং পরিশ্রম তার সাফল্যের গল্পটি সবার কাছে একটি উৎস হিসেবে দাখিল করা যায়। রাবেয়া বসরী, একজন সততা, কর্মঠতা এবং সবার জন্য সেবা করার মাধ্যমে নারী শক্তি এবং সমাজের উন্নতির দিকে এক নতুন উৎসাহী পথে চলছেন। তার উদ্দীপনা একটি অপরাজিতা নারীর জীবন চরিত্র যা প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সাফল্যে অন্তর্ভুক্ত আছে এক সমৃদ্ধ এবং উন্নত সমাজ সৃষ্টির জন্য তার উদ্দীপনা স্বার্থে অগ্রায়ণ করে এবং তার পরিশ্রম এই লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে, রাবেয়া বসরীর প্রবণতা ও প্রতিবাদশীলতা তার সম্পর্কে শেখা যায়, তার সহনশীলতা এবং কার্যকরভাবে তার প্রয়োজনীয়তা সমৃদ্ধি করতে সহায়ক হয়েছে। এবং তার অপরাজিতা এবং উন্নত সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্যে তিনি প্রবৃদ্ধি করছেন।
রাবেয়া বসরী বলেন “নারীর অগ্রযাত্রা ও ক্ষমতায়ন দেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এবং লিঙ্গ সমতা অর্জন করার জন্য অপরিহার্য। অনেক বিশ্ব নেতা এবং প-িত যুক্তি দিয়েছেন যে লিঙ্গ সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়ন ছাড়া টেকসই উন্নয়ন প্রায় অসম্ভব। টেকসই উন্নয়ন পরিবেশগত সুরক্ষা, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে গ্রহণ করে এবং নারীর ক্ষমতায়ন ছাড়া নারীরা পুরুষের মতো উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেনা।
এটা বলা দরকার যে, শিক্ষা নারীদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং তাদের আরও ভালো চাকরি খুঁজে পেতে সহায়তা করে এবং তারা পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে উৎসাহ বোধ করে। তারা জনস্বার্থে যুক্তি তর্ক করে এবং স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক নিরাপত্তা এবং অন্যান্য অধিকারের জন্য সরকারের কাছে দাবি পেশ করে। বিশেষ করে, শিক্ষা নারীদের এমন পছন্দ করার ক্ষমতা দেয় যা তাদের সন্তানদের স্বাস্থ্য, তাদের সুস্থতা এবং সংগ্রামী জীবনে বেঁচে থাকার সম্ভাবনাকে উন্নত করে।
0 comments: