অদম্য কর্মস্পৃহায় থেমে থাকেনি বুলবুল জান্নাতের সাফল্যের যাত্রা

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

যুগ যুগ ধরে আমাদের সমাজে নারীরা নানা বঞ্চনার শিকার। এ সমাজে নারীদের পারিবারিক ও সামাজিকভাবে রয়েছে নানা সীমাবদ্ধতা। তবে সকল সীমাবদ্ধতা ও প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে নারীরা এখন মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছেন। এছাড়া নিজ মেধা ও পরিশ্রমে দেশের নারীরাও হয়ে উঠছেন অপরাজিতা। শত প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে অদম্য কর্মদ্যোমী বুলবুল জান্নাতও এ ধরনের একজন অপরাজিতা নারী হিসেবে নিজেকে সমাজে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। 

নাম বুলবুল জান্নাত; পিতা মৃত আবু সৈয়দ ও মাতা মোছাম্মদ রহিমা খাতুন। তিনি ১৯৮০ সালের ১২জুলাই চকরিয়া উপজেলার সাহারবিল ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড নয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯৪ সালে সাহারবিল বিএমএস উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কৃতীত্বের সাথে অষ্টম শ্রেণী পাস করে নবম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। পড়ালেখা চলাকালীণ পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন বিএমচর ৬নং ঘোনা এলাকার আব্দুল্লাহর সাথে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। সংসার জীবনে তিনি এক মেয়ে ও তিন ছেলে সন্তানের জননী। 

বুলবুল জান্নাত ২০১১ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ১, ২, ৩নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু কিছু সংখ্যক ভোটে তিনি হেরে যান। হেরে গিয়েও শক্ত মনোবলের কাছে হারেননি বুলবুল জান্নাত। কোন অংশে থেমে থাকেনি সমাজসেবা থেকে শুরু করে সামাজিক কার্যক্রম। তাই তিনি সমাজের বিভিন্ন সামাজিক কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখে ২০১৬ সালে তিনি আবার নির্বাচন করেন এবং এতে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তিনি নির্বাচিত নারী প্রতিনিধি। তার সকল কাজে তার স্বামী ও পরিবার সহযোগিতা করে থাকেন। তারা যদি তাকে সহযোগিতা না করতেন তাহলে তিনি আজ এতদূর আসতে পারতেন না বলে তিনি জানান। তিনি ২০১৯ সালে অপরাজিতা নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন প্রকল্পে যুক্ত হন অপরাজিতার সাথে যুক্ত হওয়ার পর থেকে তিনি কোচিং মেন্টরিং, নেতৃত্ব বিকাশ নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন, জেন্ডার সমতা, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত নারী প্রতিনিধিদের দায়িত্ব কর্তব্য বিষয়ক প্রশিক্ষণ, ইউনিয়ন পরিষদের সরকারি বেসরকারি কমিটি বিষয়ক প্রশিক্ষণ, যোগাযোগ ও দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ, লিডারশিপ অ্যাডভোকেটি নেটওয়ার্কিং বিষয়ক প্রশিক্ষণ রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে মত বিনিময় সভাসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন।

কার্যক্রম: এ সকল প্রশিক্ষণ ও সভায় অংশগ্রহণের ফলে বুলবুল জান্নাতের কাজের দক্ষতা আগের চেয়ে অনেক গুণ বেড়ে যায়। তিনি জনগণের সেবার জন্য নিজের দ্বার উন্মুক্ত করে দেন। মানুষের সুখে দুঃখে তিনি এগিয়ে যান। তিনি একটি সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার সাধ্যমত মানুষকে সহযোগিতা করে থাকেন। তিনি একজন উদার মনের মানুষ হিসেবে জনগণের কাছে পরিচিতি লাভ করেন। সামাজিক ও মানবিক কাজে তার ব্যক্তিগত ভূমিকা রয়েছে অসীম এবং এক নতুন সমাজ নির্মাণে তার মূলধারা সম্মান অব্যাহত রয়েছে। তার পরিশ্রম এই লক্ষ্যেই এগিয়ে চলেছে। তিনি বর্তমানে বিএমচর ইউনিয়ন পরিষদের ২নং প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। যেখানে নারীরা ৩নং প্যানেলের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তিনি তার কর্মদক্ষতার মধ্যদিয়ে এলাকায় বাল্যবিবাহ বিষয়ে সচেতন করেন ২৫টি পরিবারকে, বাল্যবিবাহ বন্ধ করেন ১৫টি এবং শতশত পরিবারের পারিবারিক বিরোধ নিরসন করেন। 

তিনি ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহযোগিতায় ৩০ জন মহিলাকে মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান, ২৫ জন বিধবা মহিলাকে বিধবা ভাতা এবং ১০ জন প্রতিবন্ধীকে ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করে দেন। এছাড়াও নিজের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে অনেক গরীব অসহায় পরিবারকে সহযোগিতা করেছেন ও করে যাচ্ছেন। অনেক পরিবারকে সুপেয় পানির কষ্ট লাঘবে তিনি টিউবওয়েলের ব্যবস্থাও করে দেন। ধারাবাহিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ৯৯৯ ও ১০৯ নম্বরে কল করে সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধামূলক সেবা পেতে ২শতাধিক জনগণকে নিঃস্বার্থভাবে সহযোগিতা করেন। তিনি ৩২ জনকে বয়স্ক ভাতা প্রদান করেন ও সমাজের অবহেলিত ঝরে পড়া ৭০ থেকে ৮০জন শিক্ষার্থীকে স্কুলমুখী করেন। এলাকার অবকাঠামগত উন্নয়নে ১৫টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন তার সফল জীবনযাত্রায় অনেক সাফল্যসমূহ লুকিয়ে আছে। তিনি ইউনিয়ন পরিষদের শিক্ষা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, পাশাপাশি তিনি রাজনৈতিক দলের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করার ফলে তিনি বিএমচর ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পান। তিনি কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন এবং বহদ্দারকাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএমসি কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন। এসব পদবী ও মর্যাদা লাভ করার পেছনেও অপরাজিতার অবদান অন্যতম বলে স্বীকার করেন। 

তিনি একজন খুব ক্ষুদ্র পরিসর প্রশিক্ষিত নারী যা সামাজিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আত্মপ্রকাশ করেছেন। তিনি সকল সময়ের সামাজিক কর্মসূচি এবং মানবিক সেবা করার জন্য প্রবৃদ্ধি করেছেন বুলবুল জান্নাত জীবনের প্রতিটি অধ্যায় এবং উৎস হিসেবে দাখিল করা যায়। বুলবুল জান্নাত একজন সততা, কর্মঠ, এবং সবার জন্য সেবা করার মাধ্যমে নারী শক্তি আর তার শক্তি হিসেবে কাজ করছে তার স্বামী। এবং সমাজের উন্নতির দিকে এক নতুন উৎসাহী পথে চলছেন তার উদ্দীপনা একটি অপরাজিতা নারীর জীবন চরিত্র যা প্রতিটি প্রতিষ্ঠান তার সাফল্য অন্তর্ভুক্ত আছে এক সৌন্দর্য এবং উন্নত সমাজ সৃষ্টির জন্য তার উদ্দীপনা স্বার্থের অগ্রায়ন করে। তিনি আগামীতেও এভাবেই জনগণের পাশে থাকবেন বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। বুলবুল জান্নাত বলেন, “নারীদের কাজকে পুরুষ স্বীকৃতি দিতে চায় না; পুরুষের কাজটাকে নিজেরা বড় করে দেখে” তাই দেখিয়ে দিতে চাই পুরুষের পাশাপাশি আমরাও পারি সমাজটাকে বদলে দিতে। 



শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 comments: