চকরিয়া টাইমস :
তাদের মতে আগের শিক্ষাব্যবস্থা ছিলো শুধু জ্ঞান নির্ভর যেটাতে শিক্ষার্থীরা অভ্যস্ত আর বর্তমান শিক্ষানীতি অনুসন্ধান নির্ভর যা অনেকটা গবেষণার মতো।তবে আমার কাছে এই শিক্ষাক্রমটি সম্পূর্ণ বাস্তবতা বিবর্জিত বলে মনে হয়।
আপনি যে স্টুডেন্টকে পুরো বছরে একটা বই থেকে ১০ টা জ্ঞানমুলক প্রশ্ন শেখানো টাফ, সেইখানে স্টুডেন্টরা কেমনে নতুন শিক্ষানীতিতে অনুসন্ধান নির্ভর শিক্ষার সাথে খাপ খাইয়ে নিবে? আর নতুন শিক্ষানীতিতে যেহেতু পরীক্ষাটা ওভাবে আগের মতো নাই,সেহেতু একেবারেই বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা বিমুখ হবে। কেননা পরীক্ষায় পাশ করার জন্য কিংবা রোল ১, ২, ৩ ক্রমে আসার জন্য একটু আধটু হইলেও পড়তো।
বর্তমানের শিক্ষাব্যবস্থা অনেকটা প্র্যাকটিকেল নির্ভর, সেখানে অনেক পিরিয়ড রাখা হয়েছে ক্লাসরুমের বাইরে, সেটাতেও অনেক শিক্ষার্থী ক্লাস করার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসবে, ক্লাসে আসার প্রয়োজনবোধ করবে না। আর ক্লাসে না আসার কুফলটা কত ক্ষতিকর সেটা কোভিট-১৯ এর শিকার যারা তারা বুঝতে পারে।
আমরা পুরো ১২ বছর গণিতের অনুশীলনগুলোর অংক করেও গণিত এক্সপার্ট হতে পারিনি বা দুর্বলতা এখনো আছে,সেইখানে সকল অনুশীলনের অংক বাদ দিয়ে, গল্পের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীকে গণিত শিখিয়ে কতটুকু গণিতে দক্ষ করে তুলবে প্রশ্ন থেকেই যায়।
এইবার আসি ইংরেজির বেলায়, ইংরেজি যতটুকু দেখলাম মোটামুটি ভালো মনে হয়েছে,কেননা ওখানে কমিউনিকেটিভ ইংলিশে জোর দেয়ার বিষয়টা ভালো লেগেছে এইটা দরকার আছে।তবে সম্পূর্ব গ্রামার পার্ট বাদ দিয়ে একজন শিক্ষার্থী কিভাবে একটা ভাষা নিজের দখলে আনবে,সেটা আমার বোধগম্য নয়।
সে ইংরেজিতে কথা বলা শিখতে পারলো,সেটা ঠিক আছে, কিন্তু ইংরেজিতে যদি শুদ্ধ করে কিছুই লিখতেই না জানে,তাহলে তার এ শেখাটা পূর্ণাঙ্গ হইলো কই, গ্রামার ছাড়া আপনি একটি ভাষা কখনোই শুদ্ধভাবে লিখতে পারবেন না।
সবচেয়ে ক্ষতিকর হচ্ছে, পরীক্ষাটা কে ছেলেখেলা বানিয়ে দেয়া, পরীক্ষা আপনি প্রাইমারি লেভেলে না নেন, কিন্তু মাধ্যমিকে এইভাবে পরিক্ষাটাকে গুরুত্ব না দেয়া, খুবই আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত, কারণ বাংলাদেশর শিক্ষাব্যবস্থা একেবারে সর্বোচ্চ লেভেল পর্যন্ত পরিক্ষা নির্ভর। সেটা থেকে হঠাৎ বেরিয়ে আসাটা বোধহয় একটু রিস্কি হবে।
সর্বোপরি যারা এই শিক্ষানীতি প্রণয়নে কাজ করেছে,তাদের সকলকে আগামী একবছরের জন্য একেবারে মফস্বলের মাধ্যমিক স্কুল গুলোতে শিক্ষকতা করতে দেয়া উচিৎ, তখন তারা শিক্ষার্থীদের মনস্তাত্বিক বিষয়টা পারতো,বুঝলেই তারা কখনো এই শিক্ষানীতিতে যাই তো না।
এই শিক্ষানীতি যাদের হাত ধরে বাস্তবায়ন তাদেরকে কতটুকু তৈরি করতে পারছে সরকার সেটাও একটা প্রশ্ন, আমার বিশ্বাস এখনো বাংলাদেশের প্রায়ই অর্ধেকরো বেশি শিক্ষক এই বিষয়ে কোনো ট্রেনিং পাইনি, যারা মাস্টার ট্রেইনার তারাও কতটুকু বুঝে, সেটা নিয়ে একটা প্রশ্ন থেকেই যায়।
কৃষি মন্ত্রী একটা ভালো কথা বলেছেন কয়েকদিন পর পর নতুন নতুন মানুষ আসে, নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে, সেগুলো তারা ছাপিয়ে দেয়। এইটাতে ওই কর্তা ব্যক্তিদের আবার লাভ ও আছে, একটা নতুন শিক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়া মানেই, অনেক টাকার হিসাবনিকাশ।
সবশেষে একটা কথা বলি, পরিক্ষানির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বের হয়ে আসার মুল কারণ মনে হয় আমার কাছে তারা বর্তমান পরিক্ষাগুলোর প্রশ্ন ফাস ঠেকাতে পারে না,যার কারণে পরিক্ষার সিস্টেমটাই বাদ দিয়ে দিলো। বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীর চেয়ে নাহিদ ও আমার কাছে অনেক যোগ্যতাসম্পন্ন মন্ত্রী ছিলো বলে মনে হয়।
এই শিক্ষানীতি আমাদের শিক্ষার্থীদেরকে একেবারেই পড়াশুনা বিমুখ এতে কোনো সন্দেহ নাই।
লেখক:
শিক্ষক- চকরিয়া গ্রামার স্কুল।
0 comments: