১) কিশোর গ্যাংঃ কিশোর গ্যাং এটি সম্প্রতি খুব বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। যেটা বেশিরভাগ শিক্ষিত ছেলেদের ই নিজেদের মধ্যকার গ্রুপ। তারা নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করার জন্য ৫-১০ জনের একটা বাহিনী গড়ে তুলে। সম্প্রতি এরা তাদের বিপক্ষের লোকদের হত্যা থেকে শুরু করে চাদাবাজি, ইভটিজিং এবং মাদক চালানে নিয়োজিত। প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও কিশোরদের এমন খবর পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। এইতো কিছুদিন আগের ঘটনা কক্সবাজার সিটি কলেজের এক ছাত্রকে সেই এলাকা দখলে নেওয়ার অপর গ্রুপের সদস্যরা রিদুয়ান নামক এক ছাত্রকে ছুরি মেরে হত্যা করে। আরেকটা ঘটনা হলো চকরিয়া প্রশাসন ২০০ জনের তালিকা করেছে এমন যারা কিশোর অপরাধের সাথে জড়িত। তাহলে দেখুন চকরিয়ার মতো একটা উপজেলায় যদি ২০০ জনের তালিকা করা যায় তাহলে পুরো দেশে তা কত হাজারে পৌছাবে। যা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য তাদের ও দেশের স্বপ্ন পুরণের ক্ষেত্রে বড় বাধা।
নৈতিকতার অবক্ষয়ে বাংলাদেশ..!
একটা জাতি টিকে থাকে তার নৈতিক শক্তির উপর। সেটা যখন হারিয়ে ফেলে বা তার অবক্ষয় হয় তখন সেই জাতির পতন হয়। আমরা ইতিহাস দেখতে পাই আল্লাহ তায়া’লা অনেক জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছেন তাদের নৈতিকতার অবক্ষয়ের কারণে। যেমনঃ লুত জাতি, সামুদ জাতি ইত্যাদি। আমরা আমাদের দেশেও এখন নৈতিকতার ভয়াবহ অবক্ষয় দেখতে পাচ্ছি। যা আমাদের দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, ধ্বংস করে দিচ্ছে জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ গুলোকে। যদি আমরা পর্যালোচনা করি তাহলে দেখতে পারবো আমার এই সবুজে মোডানো স্বদেশ কেমন আছে, কেমন তার ভবিষ্যত হবে তা আমরা দেখতে পারবো। তাহলে চলুন দেশে চলমান অবক্ষয় গুলো দেখে আসি।
২) র্যাগ ডেঃ দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই অশ্লীল সংস্কৃতির আয়োজন চলমান। যেসকল শিক্ষকগণ ক্লাসে নৈতিকতার শিক্ষা দেয়, তারাই বেশিরভাগ এর সাথে জড়িত। তাদের প্রশ্রয়ে ছেলেমেয়েরা র্যাগ ডে নামক অশ্লীল সংস্কৃতি পালন করে যাচ্ছে। কোন ধর্ম ই অশ্লীলতা সমর্থন করেনা। তাহলে যারা জাতি গড়ার কারিগর তারা কেন এর নেতৃত্বে, এর উত্তর উনারাই ভালো দিতে পারবেন। সাদা গ্যাঞ্জিতে অশ্লীল লেখা লিখে, একজন ছেলে অপর একটা মেয়ের গালে রং মেখে উল্লাস করার নাম ই নাকি র্যাগ ডে। দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি থেকে শুরু করে প্রাইমারি স্কুল পর্যন্ত এটা চলতেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি এবং শিক্ষকগণ কিভাবে যে এই অশ্লীলতার অনুমোদন দেয় তা চিন্তার বিষয়। তাদের ছেলেমেয়েরা ও তো নোংরামিতে লিপ্ত, তারা কিভাবে একজন পিতামাতা হয়ে নিজের ছেলে এবং মেয়েকে এভাবে র্যাগ ডে নামক নোংরামি খেলায় নামিয়ে দেন, লজ্জার বিষয়। উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা একে অপরের সাথে হাতাহাতি করতেছে, নাচতেছে, গান গাইতেছে আর অভিভাবকগণ দেখেও মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন তা লজ্জাজনক। তাই দিনদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যে নৈতিকতা শিক্ষার কেন্দ্র তা উঠে যাচ্ছে, আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রুপ নিচ্ছে অশ্লীলতার শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে। প্রশ্ন রেখে গেলাম অভিভাবক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি এবং শিক্ষকগণ কবে আপনারা এর বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলবেন?
৩) ভিনদেশি সংস্কৃতি) পশ্চিমা সংস্কৃতি এবং ভারতীয় সংস্কৃতির চিপায় আমাদের স্বদেশ এবং স্বদেশের তরুণরা। অশ্লীল নাটক, সিনেমা এখন পথেঘাটে ভরপুর। যৌন সুরসুরি দেওয়া সিনেমার প্রবাহ নদীর প্রবাহের চাইতে বেশি। যে নাটক, সিনেমা গুলোতে শিক্ষণীয় কোন উপকরণ ই নাই। সেগুলো শেখাচ্ছে শুধু কিভাবে একটা মেয়ের সাথে প্রেম করা যাবে, দেখা করা যাবে, কিভাবে উঠিয়ে আনা যাবে, কিভাবে র্যাপ করা যাবে ইত্যাদি। এই দেশের তরুণদের ভবিষ্যত খুবই আঁধার। এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কোন পথ ই নেই। একমাত্র পথ হলো এসব বন্ধ করে দেয়া, আমদানি না করা। দেশের শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা আজকাল টিকটক নামক সফটওয়্যারে আবদ্ধ যা অশ্লীলতায় ভরপুর। অশ্লীল ভিডিও তৈরিতে লিপ্ত, নিজেদেরকে হিরো বানানোর জন্য। যাদের উচিত পড়ালেখায় সময় দেওয়া, তারা ব্যস্ত টিকটক এবং অশ্লীল নাটক বানাতে। তাহলে কিভাবে এই জাতির তরুণ সন্তানদেরকে নিয়ে আশা করা যায় যে এরা দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে এগিয়ে নিয়ে যাবে। হায় আফসোস। ছেলেমেয়েদের চুলের বিভিন্ন ধরনের স্টাইল, যা টোকাই পুলাপাইন ও দেয়না। পোশাকের ক্ষেত্রে তো বলা ই লাগবে না, যে যত ফাঁটাছিডা গায়ে দিতে পারে হোক সে মেয়ে বা ছেলে সে ই আধুনিক। যা সচেতন অভিভাবকগণ কিভাবে মেনে নেই, চিন্তা করেই কুল পাওয়া যায়না। সম্ভবত ফেব্রুয়ারীর ঘটনা একটা মেয়ে মায়ের সাথে অভিমান করে ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্নহত্যা করে। তার মাকে জিজ্ঞেস করাই সে বলেছে, মেয়েটি চাইতো তার ভাইয়ের মতো শার্ট প্যান্ট গ্যাঞ্জি পড়ে চলাফেরা করতে মা এসব কাজে বাধা দেওয়ায় সে আত্নহত্যার পথ বেচে নেই। অভিভাবকদের প্রতি পরামর্শ, আপনি যে মেয়েকে ছোটবেলা থেকে শার্ট প্যান্ট গেঞ্জি পড়িয়ে বড় করতেছেন সে বড় হয়েও সেই পোশাক গুলোর প্রতি আকৃষ্ট হবে তাকে সেখান থেকে ফেরানো যাবে না। তাই তাকে ছোটবেলা থেকেই মেয়েদের পোশাক ই গায়ে দিতে অভ্যস্ত করুন তা নাহলে সে আপনাদের নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যাবে।
৪) বিবাহবহির্ভূত প্রেম) সমাজে এটি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। সমাজের ৭৫% ভাগ ছেলেমেয়েরা এটাতে লিপ্ত। এটা সমাজে এতটা প্রভাব বিস্তার করতেছে বিবাহ নাই বললে চলে। তাই দেশে প্রতিদিন এই হারাম সম্পর্কের জন্য অহরহ শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা আত্নহত্যার মতো কাজ করে যাচ্ছে। যার কারণ পরিবার মেনে না নেওয়া অথবা শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে ছেড়ে চলে যাওয়া। এই অভিশপ্ত প্রথা বিলুপ্ত করে সমাজে বিবাহকে প্রতিষ্ঠিত করতে না পারলে জ্বিনা ব্যভিচারে দেশ ও সমাজ ভরপুর হয়ে যাবে। প্রেমের ক্ষেত্রে শারীরিক সম্পর্ক ই বেশি গুরুত্ব পাই আর এর জন্যই ছেলেমেয়েরা প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। ১৪ই ফেব্রুয়ারী ভালোবাসা দিবস আসলেই এদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পার্কে তরুণ তরুণীদের মেলামেশা ভাদ্র মাসের কুকুরদের মেলামেশাকেও হার মানায়। এর পেছনে অভিভাবকদের অসচেতনতা ই বেশি দায়ী। আজকাল সচরাচর এটাও দেখা যায়, ছেলেমেয়েরা তাদের একে অপরের সম্পর্ককে জাষ্ট ফ্রেন্ড রপ দিয়ে অনেক খারাপ কাজ করে যাচ্ছে। একসঙ্গে ভ্রমণ, একসাথে হোটেলে থাকা, একসাথে জন্মদিনের অনুষ্ঠান পালন সহ অনেক। আর এর ফলে হচ্ছে কি, বন্ধুর দ্বারা বান্ধবী ধর্ষন। পত্রিকায় পাতায় প্রতিদিনই নিউজ হচ্ছে, বন্ধুর সাথে ঘুরতে গিয়ে অমুক মেয়ে ধর্ষনের শিকার, জন্মদিন পালন করতে গিয়ে ধর্ষনের শিকার ইত্যাদি। তাই মেয়েদের ও সচেতন হওয়া দরকার তাদের নিরাপত্তা নিয়ে। এবং অভিভাবকদের উচিত তার মেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার নাম দিয়ে কোন কোন ছেলের সাথে আড্ডায় আছে, ঘুরেবেচ্ছে ইত্যাদির তদারকি।
৫) পরকীয়া ও তালাকপ্রথা) পরকীয়া বেড়ে যাচ্ছে দিনদিন। এটি বেশি হচ্ছে প্রবাসীদের স্ত্রীদের কর্তৃক। প্রবাসীরা কষ্টে উপার্জিত টাকা দেশে বউয়ের কাছে পাঠায় আর বউয়েরা সেই টাকা দিয়ে অন্য পুরুষের সাথে ভাগাভাগি করে। এর পেছনে আরেকটা কারণ হলো, বিবাহবহির্ভূত প্রেম। সমাজে এই অভিশপ্ত প্রথা বেশি বেড়ে যাচ্ছে। যার ফলে সমাজের পারিবারিক বন্ধন ভেঙে যাচ্ছে। স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে বিশ্বাসের পাত্র হিসেবে মেনে নিতে পারছেনা। তাই বিবাহবিচ্ছেদের মতো ঘটনা প্রতিদিন অহরহ। যা বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বিবাহবিচ্ছেদ এটি একটা সাধারণ ঘটনার মতো হয়ে যাচ্ছে, যার কারণ অন্য পুরুষের সম্পদের প্রতি আসক্তি এবং অন্য মেয়ের সৌন্দর্যের প্রতি আসক্তি। এক্ষেত্রে আমাদেরকে সচেতন হওয়া দরকার। সম্প্রতি গবেষণায় উঠে এসেছে তালাক দেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষিত নারী এবং শহরের নারীরাই এগিয়ে। প্রায় ৫৭% তালাক-ই দেয় স্ত্রী, যার কারণ দেনমোহরের লোভ। তাই আমাদেরকে এই তালাক প্রথা বিলুপ্ত করার জন্য দেনমোহর ৩ লাখের নিচে চাই। কারণ যে তালাক গুলো দেওয়া হচ্ছে সব দেনমোহর ৬ লাখের উপরে। (গবেষণা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষকের)
৬) সমকামিতা) নিকৃষ্ট এক নোংরামি হলো, ছেলে ছেলের সাথে এবং মেয়ে মেয়ের সাথে যৌন মিলন। এই অশ্লীল কাজের জন্য আল্লাহ তায়া’লা লুত জাতিকে মাটির নিচে ধসিয়ে দিয়েছিলেন।সে অভিশপ্ত নোংরা সংস্কৃতি এখনো বিদ্যমান থেকে গেছে। এই কাজ মানসিক ভাবে বিকারগস্ত ব্যক্তিদের দ্বারা এবং পশুদের দ্বারাও সম্ভব নাহ। সম্প্রতি বাংলাদেশে এটি বেড়ে যাচ্ছে। এইতো কিছুদিন আগের ঘটনা ফেনীতে একটা মেয়ের বাড়িতে চলে আসছে আরেকটা মেয়ে। যারা কিনা একে অপরকে বিয়ে করতে চাই, সংসার করতে চায়। দেখুন, দেশের তরুণদের অবস্থা কোন পজিশনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। পশ্চিমাদের এই নোংরা সংস্কৃতি হানা দিয়েছে ৯০% ভাগ মুসলমানদের দেশে। হয়তো এদের পেছনে ইন্ধনদাতা আছে। তবুও আমাদেরকে আরও সচেতন হওয়া দরকার, যাতে করে এই নোংরা সংস্কৃতি আমাদের দেশে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে। তা না পারলে এই দেশের তরুণদের ভবিষ্যত অন্ধকার। একটা ছেলে আরেকটা ছেলেকে স্পর্শ করা, একটা মেয়ে আরেকটা মেয়েকে তার স্পর্শকাতর জায়গায় স্পর্শ করা সমকামিতার অংশ। বন্ধু মহলে যারা ঘনিষ্ঠ, যারা হোস্টেলে, মেসে একে অপরের সাথে রাত কাটায় তারা এসব কাজে বেশি লিপ্ত। তরুণদের উচিত এই অভিশপ্ত নোংরা কাজ থেকে নিজেকে এবং সমাজকে বাচানো। তা না হলে আল্লাহর ক্রোধের শিকার হয়ে তার গজবে পতিত হতে হবে।
৭) মোবাইলের অপব্যবহার) মোবাইল ব্যবহার আজকাল ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। যদিও মোবাইল যোগাযোগের মাধ্যম কিন্তু আজকালকার তরুণরা মোবাইলকে এই কাজে ব্যবহার মোটেও করছেনা। তারা ব্যবহার করতেছে গেইমে, অশ্লীল নাটক সিনেমা দেখায় এবং পর্ণোগ্রাপিতে। পাবজি ফ্রিফায়ার নামক গেইম আসক্তি শিক্ষিত তরুণদেরকে মানসিক ভাবে পাগল বানিয়ে দিচ্ছে। তারা ক্লাসের বাহিরে বেশিরভাগ সময় কাটাচ্ছে পাবজি ফ্রি-ফায়ার গেইমে। যার ফলে তারা পড়ালেখায় পিছিয়ে যাচ্ছে এবং মানসিক ভাবে বিকারগস্ত হয়ে যাচ্ছে। অশ্লীল নাটক সিনেমা তাদেরকে খারাপ কাজে উৎসাহিত করতেছে যার ফলে তারা প্রেম, বিবাহবহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক ইত্যাদিতে জড়িয়ে পড়তেছে। পর্নোগ্রাপিতে আসক্তি হয়ে যাচ্ছে, এরফলে তারা ধর্ষণসহ বিভিন্ন নোংরা কাজে লিপ্ত হচ্ছে। যার একমাত্র কারণ হচ্ছে মোবাইলের অপব্যবহার। সারাক্ষণ মোবাইলে ভিডিও দেখা, রাত জেগে ছেলেমেয়ে একে অপরের সাথে আড্ডায় ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যয় করা ইত্যাদিতে কাটছে তরুণদের গুরুত্বপূর্ণ সময় গুলো। আজকাল পিতামাতারা তাদের সন্তানদেরকে জন্মের পর থেকেই মোবাইলে ডুবিয়ে রাখে তাই এখন ক্লাস ফাইভের উপরের সব ছেলেমেয়েদের হাতেহাতে স্মার্টফোন। সন্তানের কান্না থামাতেয় মোবাইল ধরিয়ে দেওয়া হয়। তাই তরুণদের মাঝে অন্ধত্ব, মানসিক ভাবে বিকারগস্ত সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। এর থেকে পরিত্রাণের একমাত্র পথ হলো, ছেলেমেয়েদেরকে ছোটবেলা থেকে মোবাইলের কাছ থেকে যথাসম্ভব দূরে রাখা।
৮) মাদকের সহজলভ্যতা) মাদক এখন তরুন প্রজন্মের কাছে নিয়মিত নাস্তার মতো হয়ে গেছে। নাস্তা না খেলেও তরুণদেরকে সিগারেট, গাজা, ইয়াবা খাইতে হয়। তা না হলে তাদের দিন কাটেনা। এইতো শেষ হওয়া অনার্স চতুর্থ বর্ষের পরিক্ষা দেওয়ার সময় দেখলাম, পরিক্ষা শুরু সকাল ৯ টায় ছেলেরা পরিক্ষার কেন্দ্রে নাস্তা করে প্রবেশ করার পরিবর্তে শতকরা ৬৫% ছেলে সিগারেট পান করে প্রবেশ করতেছে। ভাবুনতো, এদেশের শিক্ষিত তরুণরা কতটা মারাত্মক খারাপ কাজে জড়িয়ে আছে। এই ছেলেরাইতো কিছুদিন পরে শিক্ষকতা পেশায়, ব্যাংক, সরকারি গুরুত্বপূর্ণ পেশায় চাকুরিতে যোগ দিবে তাদের যদি মাদকের প্রতি এতো আসক্তি থাকে তাহলে কিভাবে আশা করা যায় তারা সততার সঙ্গে জাতির নেতৃত্ব দিবে। দেশের শিক্ষিত তরুণরা সিগারেট সহ মাদকের প্রতি বেশি আসক্ত হয়ে যাচ্ছে। হবেইনা কেনো, যদি শিক্ষকরাই তার ছাত্রদেরকে সিগারেট আনতে পাঠান। তাহলে সেই শিক্ষকদের ছাত্ররা কি ভালো হবে, যেমন শিক্ষক তেমন ছাত্র। দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যান্টিনে, আশেপাশের দোকানে সিগারেট সহজলভ্য নাস্তার মতো। তাই ছেলেরা মাদকের প্রতি আসক্ত হয়ে যাচ্ছে। আজকাল মেয়েরাও মাদকাসক্ত, তারা-ও এই কাজে পিছিয়ে নেয়, ছেলেদের মতো এগিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনেক হোস্টেল সিগারেট, গাজা খাওয়ার সহজ রুম হিসেবে পরিণত হচ্ছে। যা তদারকির ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সচেতনতার অভাব। এই থেকে তরুণদের ফিরিয়ে আনতে হলে আগে শিক্ষকদেরকে সিগারেট সহ মাদক থেকে বিরত থাকতে হবে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশেপাশের সব দোকান থেকে সিগারেট সহ সব মাদকদ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করতে হবে। তা না পারলে এদেশের তরুণদের ভবিষ্যত ধ্বংস ছাড়া আর কিছু নেয়। সাথে অভিভাবকদের ও সচেতন হওয়া দরকার, আপনার ছেলেমেয়ে কার সাথে চলাচলের করতেছে তার তদারকি করা।
৯) অপরাজনীতি) দেশের তরুণদের নৈতিক অবক্ষয়ের ক্ষেত্রে নোংরা রাজনীতির ভূমিকা ও অনেক। নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করার জন্য তরুণদেরকে ব্যবহার করে আসতেছে রাজনৈতিক নেতারা। তাদেরকে দিয়ে চাদাবাজি, দখলবাজি, খুন, চোরাচালান, মাদকদ্রব্য পাচার ইত্যাদি করে আসতেছে রাজনৈতিক নেতারা। তারা নিজেদের প্রকাশ না করে তরুণদেরকে প্রকাশ করে তাদের ভবিষ্যত ধ্বংস করে দিচ্ছে। শিক্ষিত তরুণদের বুঝা উচিত, তাদেরকে কোন নেতা কিভাবে ব্যবহার করে যাচ্ছে। তাকে ব্যবহারের ফলে কি তার ভবিষ্যৎ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, নাকি সে সমাজ ও দেশে সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত হচ্ছে। সামান্য টাকার বিনিময়ে, পদবির বিনিময়ে সে তার নিজের মেধাকে বিলিন করে দিচ্ছে যা তার ভাবনায় ই নাই। তরুণদের এ ব্যপারে আরো সচেতন হওয়া দরকার। নোংরা রাজনীতি থেকে বের হয়ে এসে দেশ ও সমাজের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করা। এবং ধর্মীয় রাজনৈতিক দল/সংগঠনে নিজেদেরকে অংশগ্রহণ করানো।
১০) ধর্মীয় শিক্ষার অভাবঃ উপরের ৯ টি সমাজ, দেশ এবং শিক্ষিত তরুণদের ভবিষ্যত ধ্বংসের একমাত্র কারণ হলো দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিক শিক্ষার অনুপস্থিত। পাঠ্যবইয়ে নৈতিকতা শিক্ষা দেয় এমন কোন বই বা লেখা ই নাই। তাহলে কিভাবে আশা করা যায় এই দেশের তরুণরা নৈতিক ভাবে শক্তিশালী হবে। কোন ধর্ম অনৈতিকতা, অশ্লীলতা শিক্ষা দেয়না। কিন্তু এই দেশ ৯০ভাগ মুসলমানদের দেশ হওয়া সত্ত্বেও এদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলামী শিক্ষার অভাব। স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটির পাঠ্যবইগুলোতে ধর্মীয় কোন নৈতিক শিক্ষার আলোচনা ই করা হয়নি। মাদ্রাসায় কিছুটা উপস্থিত হলেও তা সংগ দোষে লোহা ভাসতেছে। সবচেয়ে নৈতিকতার ক্ষেত্রে উন্নত জাতি হলো মুসলমান, আর সেই মুসলমানদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ বাংলাদেশ তবুও এখানে ইসলামের কোন শিক্ষা ই স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটিতে দেওয়া হচ্ছে না। তাই দেশের শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা কিশোর অপরাধ, অশ্লীল র্যাগ ডে, ভিনদেশি সংস্কৃতি, পরকীয়া, সমকামীতা, বিবাহবহির্ভূত প্রেম, মাদকাসক্ত, মোবাইলের অপব্যবহার, নোংরা রাজনীতির মতো জঘন্যতম খারাপ কাজে জড়িয়ে যাচ্ছে। ইসলামে যে উপরের কাজ গুলো হারাম, আল্লাহর নিষিদ্ধ তা এদেশের তরুণগণ জানেন ই না। কারণ তা এদেশের পাঠ্যবইয়ে নাই। তাই দেশের তরুণ প্রজন্ম অনুসরণ/আদর্শ/মডেল হিসেবে নিচ্ছে খেলোয়াড়দেরকে, অভিনেতা অভিনেত্রীদেরকে, নাস্তিক কবি-লেখকদেরকে, কুরিয়ান ছেলেদেরকে। তাদের জন্য যে মহান আল্লাহ তায়া’লা এক নির্ভেজাল, যার জীবনে কোন খারাপ চরিত্রে বিন্দু পরিমাণ ও হাত লাগেনি মুসলিম মিল্লাতের শেষ নবী মোহাম্মদ সাঃ কে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করতে বলেছেন তা জানিয়ে দেওয়া উচিত। কারণ তার জীবনেই রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ। অবক্ষয় থেকে তরুণদেরকে ফিরিয়ে আনতে চাইলে, ইসলামের সু-মহান আদর্শ, নবী-রাসুলদের জীবনী, সাহাবাদের জীবনীগ্রন্থ, আরও যেসকল ইসলামের পতাকাবাহী অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম পরিচালনা করে প্রয়াত হয়েছেন তাদের জীবনী পাঠ্যবইয়ে যোগ করতে হবে। এদেশের তরুণদেরকে জানিয়ে দিতে হবে তারা অপসংস্কৃতি অনুসরণকারী জাতির সন্তান নয়, তারা ভারতীয় এবং পশ্চিমা সংস্কৃতির অনুসরণকারী জাতি নয়। তাদের রয়েছে সোনালী ইতিহাস, ঐতিহ্য, আদর্শ । তাদের পূর্ব পুরুষগণ অশ্লীল নোংরা সংস্কৃতির সাথে কোনদিন আপোষ করেনি এমনকি তারা সেই অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। এটা যদি অন্তর্ভুক্ত করা না যায় তাহলে এদেশের ভবিষ্যত প্রজন্ম এদেশের জন্য কালসাপ হয়ে দাডাবে, তখন তাদেরকে থামানোর জন্য, সংশোধন করার জন্য কোন পথ খোলা থাকবে না। তাই আসুন, জাতির উঠতি শ্রেষ্ঠ সন্তানদেরকে নৈতিক অবক্ষয় থেকে রক্ষা করার জন্য আজকে থেকেই পদক্ষেপ নিই। এবং একটা সোনার দেশ হিসেবে এই দেশকে সারাবিশ্বে প্রতিনিধিত্ব করতে পারার মতো তরুণদের গড়ে তুলি। কেননা তরুণরাই দেশের ভবিষ্যত, তরুণরাই আগামীর রাষ্ট্রের সেবক, তরুণরাই আগামীর দেশের নীতিনির্ধারক।
লেখক- তায়েফুল ইসলাম শাওয়াল
তরুণ চিন্তাবিদ ও গবেষক
0 comments: