বিএনপির সাথে জোট আর কতদিন?

চকরিয়া টাইমস : 

সুযোগ পেলে প্রায়শই জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে প্রশ্ন করি—বিএনপির সাথে জোট আর কতদিন টেনে নিয়ে বেড়াতে হবে? এ যুগপৎ সফরের কি কোনো শেষবিন্দু নাই?


নেতৃবৃন্দের উত্তর শুনে হতাশ হই। নিজেকে প্রবোধ দেই—কী জানি বাপু, ছোটো মাথায় এত বড়ো ইস্যুর ভাবনা না থাকায় ভালো। তৃণমূলের ক্ষুদ্র একজন কর্মী হয়ে জাতীয় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কূলকিনারা খুঁজে পাওয়া সত্যিই তো কঠিন। 

আমি অবাক হই জামায়াত নেতৃবৃন্দের উত্তর শুনে। উত্তর মোটাদাগে তিনটা।

০১. 

জোট ভাঙার দায় আমরা নেবো না। বিএনপি বের করে দিক, আলহামদুলিল্লাহ বলে চলে যাব। আগ বাড়িয়ে আমরা ভাঙতে যাব কেন? 

০২.

রাজনৈতিক শত্রু বাড়িয়ে লাভ কি? অন্তত বিএনপির সাথে তো মিনিমাম রাজনৈতিক বোঝাপড়া আছে; এই বোঝাপড়া বাদ দিয়ে লাভ কি? 

০৩.

জোট কি আর আদতে আছে? ভেঙেই তো গেছে। বিএনপিও ডাকে না, আমরাও আগ বাড়িয়ে যাই না। আনুষ্ঠানিক ঘোষণার দরকার কি? এভাবেই যে যার মতো চলতে থাকুক৷ 

আমি অন্তত মোটাদাগে এই তিনটা উত্তর খুঁজে পেয়েছি। হয়তো আরও ভালো কিংবা যুতসই উত্তর (যুক্তি) আছে, আমি জানি না; এ আমার জ্ঞান ও বোধের দৈন্যতা। 

তবে, একজন নাদান হিসেবে প্রায়শই কিছু রাজনৈতিক ভাবনা এসে মস্তিষ্কে কেমন জানি একটা নড়াচড়া করে! তখন অনেককিছু বুঝে উঠি না।

সমাজ সংস্কারের মহান স্বপ্নে বিভোর একটা দল ২২ বছর পূর্বে নেওয়া একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের সংস্কার আনতে এতটা দ্বিধাগ্রস্ত কেন? অবুঝ মনে প্রশ্ন জাগে খুব৷ একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের সংস্কার আনতে এতটা দ্বিধাগ্রস্ত হলে একটা দেশের সামগ্রিক সংস্কার কর্মযজ্ঞ কতটা সম্ভব হবে? তৎকালীন রাজনৈতিক বাস্তবতায় জোটভুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়তো সঠিক ছিল এবং তার ফলাফল সবাই দেখেছে। জোটের যৌবনে উভয়ে উপকৃত হয়েছে, একটু পরিণত বয়সে উভয়ে মূল্য দিয়েছে। এখন শেষ বিদায়ের জানাজা প্রস্তুত হয়েছে। মুশকিল হলো, লাশ দেখে জানাজায় লাখো মুসুল্লি সমেবেত, কিন্তু লাশের পরিবারের সদস্যরা জানাজা করতে রাজি নয়। কফিন থেকে লাশ আইসিইউতে নিতে চায়! জনতা জানাজা না পড়েই দুআ করে বিদায় নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, সে খেয়াল নেই! 

কী আশ্চর্য! 

২২ বছরের জোটভুক্ত রাজনীতির হিসেবনিকেশ করতে রাজি হচ্ছে না। একটা সিদ্ধান্ত মানে কি দলীয় স্থায়ী কর্মনীতি/কর্মসূচি? পরিবর্তিত রাজনৈতিক বাস্তবতা, বিশ্ব রাজনীতির গতিধারা, জনপরিসরের পরিবর্তিত ভাবনা—কোনো কিছুই যেন ধর্তব্যে আসছে না। দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার আকাঙ্খা যাদের আছে, তারা অন্তত এতটা রাজনৈতিক স্থবিরতাকে আলিঙ্গন করতে পারে না। এই সমাজব্যবস্থাকে ভেঙে নতুন সমাজ গড়ার বিপুল সাহস যারা করে, তারা একটা ক্ষুদ্র রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে ভেঙে ফেলতে ভয় পায়, দ্বিধাগ্রস্ত হয়—ভাবতে কেমন যেন লাগে। 

রাজনীতিতে তারা এগিয়ে যায়, যারা পলিটিক্যাল টাইমিং বোঝে। পলিটিক্স মানেই প্রো-একটিভনেস। প্রো-একটিভিটির একটা ঝুঁকি আছে সত্য, তবে ঝুঁকি উৎরে গেলে ন্যাচারাল বিগ এ্যাডভান্টেজ সামনে আসে। দেশে দেশে সফল রাজনীতিবিদ কিংবা রাজনৈতিক দলের ইতিহাস পড়ে দেখুন—ঝুঁকিই তাদের সাফল্যের রাজপথ এঁকে দিয়েছে। নির্বিবাদে, ঝুঁকিহীন কে কোথায় বড়ো সাফল্য পেয়েছে?

সমাজে পরিবর্তন প্রত্যাশী একটা দল এভাবে স্থবির রাজনীতি করতে পারে না। 'দেখি কী হয়', 'দেখি ওরা কী করে', 'দেখি ওরা কতদূর যেতে পারে' টাইপের চিন্তা দিয়ে পুকুরের এপাড় থেকে ওপাড়ে যাওয়া যায়, সমুদ্র পাড়ি দেওয়া যায় না। বিপ্লব কোনো স্থবির রাজনীতির নাম নয়, প্রচন্ড গতিধারা সম্পন্ন রকেট রাজনীতিই রাজনৈতিক বিপ্লব৷ বিপুল হিম্মত, অনঢ় মনোবল, সময়োচিত পদক্ষেপ, ঝুঁকি গ্রহণের দুঃসাহসই নতুন ভোর এনে দেয়। 

জোট রাজনীতি নিয়ে ট্র‍্যাডিশনাল কিছু জবাবের প্রত্যুত্তরে ৫০টি যৌক্তিক জবাব দেওয়া সম্ভব। আজকের জোট রাজনীতি কতটা অসাড় ও মূল্যহীন, তা বুঝতে পলিটিক্যাল সাইন্টিস্ট হওয়ার দরকার নাই বোধকরি। তৃণমূলের সাধারণ কর্মীরাও বোঝে—এই জোট কতটা বিপদের কারণ হয়ে আছে। 

জামায়াতের গা এক বিশেষ চামড়ায় আবৃত। যতই অপমান করুক, গায়ে লাগবে না। দুনিয়ার কেউ না জানুক, জামায়াত অন্তত জানে—কেন তাদের এত বেশি রাজনৈতিক মূল্য দিতে হয়েছে, হচ্ছে। বিএনপি জোট ছেড়ে দিলে জামায়াতের রাজনীতি রাতারাতি কীভাবে ইউটার্ন নিবে, সেটা কে না জানে? প্রতিপক্ষ শিবির থেকে কী কী অফার ছিল, এটা সবাই কী করে জানবে? বন্ধুত্বের মূল্য জামায়াতকে নাকি দিয়ে যেতেই হবে আর বন্ধুরাও সুযোগমতো মাঝেমধ্যে চাবুক হাঁকাতে থাকবে। পরিস্কার অস্বীকার করবে বন্ধুত্ব। ছাগলে তিন নম্বর বাচ্চা বলে গালি দিবে। শত্রুর ভাষায় হুংকার ছুঁড়বে। বিপদে ট্রল করবে। দেশের আজকের অবস্থানের জন্য বন্ধুকে দোষারোপ করবে। সুযোগ পেলেই অপমান করবে।

এভাবে বন্ধুত্ব হয় না। বিএনপির কাছে আত্মমর্যাদা বিকিয়ে দিয়ে রাজনীতি হয় না। জোট রাজনীতিতে দাদাগীরি সবাই-ই করতে পারে চাইলে। কাউকে রাজনীতির মাঠ বর্গাচাষ করতে দেওয়া হয়নি। খেলার ওপর খেলা আছে। জামায়াত নেতৃত্ব কখনোই কর্মীদের মনঃকষ্ট বুঝতে চায়নি। জামায়াত তার রুকনদের ভোট নিয়ে দেখুক—কত শতাংশ রুকন বিএনপি জোটে থাকতে চায়, আর কত শতাংশ স্বাধীন, আত্মমর্যাদাপূর্ণ নতুন রাজনীতি করতে চায়। এনাফ ইজ এনাফ। লেটস গো এহেড অন ইয়োর ওয়ন ওয়ে।

সময় এসেছে দু'জনার পথ দু'দিকে দেখার। বিএনপি জামায়াতের কবল থেকে উদ্ধার হয়ে দেশকে উদ্ধার করুক। প্রায়শই তারা বলেন, ক্ষমতার খুব কাছে তারআ পৌঁছে গেছেন, কেবল জামায়াতই বাধা। তো, ভেঙে ফেলা হোক এই বাধার দেওয়াল। জামায়াতেরও লাখো কর্মীদের মনের ভেতরের ব্যাথা দূর হোক। জামায়াত কর্মীরাও প্রাণ খুলে নিজেদের মর্যাদা নিয়েই স্বাধীন ও স্বকীয় রাজনীতি করতে চায়।

ছোটো মুখে বড়ো কথা বলে রাখছি। আজ হোক কাল হোক, এই জোট ভাঙবে। যারা প্রো-একটিভলি এই অসাড় জোট ভেঙে দিতে পারবে, তারাই রাজনীতিতে এগিয়ে থাকবে অনেকটা। গৎবাঁধা কিছু উত্তরে না থেকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের সংস্কারকে রাজনৈতিকভাবেই দেখে দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।

আবেগের বশবর্তী হয়ে এ কোনো ছেলেখেলা দাবি নয়, মুক্তিকামী কোটি মানুষের আকুতি। অনেক তো হয়েছে। স্পষ্ট করে বলতে হবে—নিজেদের মতো ব্যাগ গুছোনোর সময় এসেছে। 

রাজনীতি সাহসীদের জন্য, ট্র‍্যাডিশনালিস্টদের জন্য নয়। 


লেখক -নুর মোহাম্মদ আবু তাহের

চেয়ারম্যান

গুনাহার ইউনিয়ন পরিষদ, বগুড়া।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

1 comment:

  1. Casino Game For Sale by Hoyle - Filmfile Europe
    › casino-games › casino-games › casino-games 1등 사이트 › casino-games Casino Game for sale by Hoyle on Filmfile Europe. https://septcasino.com/review/merit-casino/ Free shipping for most countries, no download filmfileeurope.com required. Check the 출장샵 deals febcasino.com we have.

    ReplyDelete