খুটাখালীবাসীর সেবা করা এখন নেশায় পরিনত হয়েছে : মুহাম্মদ আবদুর রহমান চেয়ারম্যান

মো. সেলিম উদ্দিন (চকরিয়া টাইমস) :

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আসন্ন। ইতিমধ্যে পেরিয়ে গেছে নির্বাচিতদের মেয়াদকাল। এ মেয়াদে কেমন কাটালেন? কি আশা আকাঙ্খা নিয়ে নির্বাচনে এসেছিলেন? কতটুকুই বা করতে পেরেছেন? ব্যাক্তিগত চাওয়া পাওয়াই বা কতটুকু পুরন করেছেন? এসব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির সাক্ষাৎকারমূলক প্রতিবেদন...(১)।
আজ উপস্থাপন করবো চকরিয়া উপজেলার ১৭নং খুটাখালী ইউনিয়নের দু'বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আবদুর রহমানকে। যিনি নিজেকে জনসাধারনের জন্য বিলিয়ে দিয়েছেন নিজের সবটুকু চাওয়া পাওয়া।
৯ সেপ্টেম্বর বৃহষ্পতিবার বিকেল ৫ টা। খুটাখালী বাজারের উত্তর-পুর্ব পাশে অবস্থিত ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আবদুর রহমানকে দরজায় নক করতে গিয়ে দেখা গেলো দরজা খোলা। ভিতরে ৩/৪ জন নিয়ে তিনি আছরের নামাজ আদায় করছেন। বাইরে বেশ ক'জন লোক বসে আছে। নামাজের পর চেয়ারম্যান সাহেব তাদের কথা শুনছেন। এরই মধ্যে সালাম দিলে বসতে বলে চা-বিস্কিট আনতে বললেন। তাদের সাথে কথা বলা শেষ হতে না হতেই আরো লোকজন আসা শুরু করলো।
বললাম এরকম কি আজই নাকি ... কথা শেষ করতে না করতেই চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আবদুর রহমান বলে উঠলেন আল্লাহর ৩০ দিনই এরকম। আমার বাসাও পরিষদের দরজা সকলের জন্য খোলা। বিশেষ করে বাসায় প্রতিদিন ফজরের পর থেকে সকাল ৯ টা ১০টা পর্যন্ত,পরিষদে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এরকমভাবে এলাকার লোকজনের কথা শুনি। বাদ যায়নি শুক্রবারও। তারপর অফিস আদালতে যাই।
১৭নং খুটাখালী ইউনিয়নটি চকরিয়া উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে অবহেলিত এলাকা ছিলো। এছাড়া ভৌগলিক অবস্থানের কারনে এলাকার রাস্তাঘাট না থাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিলো করুন। বর্তমানে তার আমুল পরিবর্তন হয়েছে। এখন প্রায় প্রতিটি রাস্তা কার্পেটিং করা, কার্পেটিং না থাকলেও ইটের সলিং করা, কাঁচা রাস্তা বলতে নেই। ব্রীজ কালভাটসহ আত্মসামাজিকতারও পরিবর্তন হয়েছে।
চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আবদুর রহমান এর বাড়ি এই ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড হাজীপাড়া গ্রামে। পিতা মৃত আবদুর রশীদ। পরিবারের ৫ ভাই ও ৪ বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। তিনি বিগত ১৯৮৩ সালে কামিল (হাদিস), ১৯৮৯ সালে কামিল (আরবী সাহিত্য) সম্পন্ন করে ইউনিয়নের দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্টান তমিজিয়া ইসলামিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদরাসায় (১৯৮৪) সালে শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করেন। বর্তমানে তাঁর চাকরির বয়স প্রায় ৩৭ বছর।
কেন চেয়ারম্যান হতে এলেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, এলাকার উন্নয়নের জন্য। আমার ইউনিয়নে আজ থেকে ২০ বছর আগে কোন পাকা রাস্তা ছিলো না। ছোটকাল থেকে যখন দেখতাম মানুষ চলাচল করতে পারছেনা। খালের উপর কাঠের সাঁকো তাও আবার লক্কর জক্কর মার্কা। এছাড়া এলাকার জনপ্রতিনিধির কাছে গিয়ে মানুষ যখন কষ্ট পেয়ে ফেরত আসতো, তখন আমার খুব খারাপ লাগতো।
তখন থেকেই ভাবতাম আমি যদি চেয়ারম্যান হতে পারতাম তাহলে হয়তো এ সবের উন্নয়ন করতে পারতাম। আর মানুষ যাতে মনে কষ্ট নিয়ে ফেরত না যায় তার ব্যবস্থা করতাম। সেই মনোভাব নিয়েই বিগত ২০০৩ সালে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন শুরু করেছি। এরপর ২০১১ সালের নির্বাচনে ১৮শ ভোটের ব্যবধানে (দেয়ালঘড়ি) চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই। ২০১১ সালে পুনরায় সাড়ে ২২শ ভোটে (আনারস) নির্বাচিত হই।
যতটুকু আশা নিয়ে চেয়ারম্যান হয়েছেন তার কতটুকু করতে পেরেছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার আশা ও প্রতিশ্রুতির প্রায় ৬০ ভাগ সফল হতে পেরেছি। এখনো কিছু কিছু কাজ বাকি আছে, আর কিছু কাজ চলমান আছে। আমি চেয়ারম্যান হওয়ার পর সর্বপ্রথম খুটাখালী-শান্তিবাজার সড়কে মাটি ভরাট করে কার্পেটিং করেছি। এছাড়া ফরেষ্ট অফিসপাড়া, ছড়িবিল,পুর্বপাড়া, নয়াপাড়া,উত্তর ফুলছড়ি,গর্জনতলী,মেদাকচ্ছপিয়া,শিয়াপাড়া,থমতলা, রাস্তাগুলো কার্পেটিং করেছি। বাকি রাস্তাগুলো ইটের সলিং করেছি। আমার আমলে ১০টি (ছোট-বড়) ব্রীজ কালভাট করেছি। এখন শুধু প্রয়োজন বাড়ি থেকে বাড়ির সংযোগ রাস্তা।
আমি এ পর্যন্ত প্রায় ২০ ভাগ বয়স্ক জন সাধারনের বয়স্ক ভাতা, ৩০/৪০ ভাগ বিধবাদের বিধবা ভাতা,বয়স্ক ভাতা, ৮০জনের মধ্যে নিয়মিত ভিজিডি, প্রায় ২০৯৫ লোকের মধ্যে ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে নিয়মিত সাহায্য সহায়তা করে আসছি।
বর্তমানে করোনাকালিন সময়ে (গত বছরের শুরু থেকে) এলাকার জন সাধারনের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে নিজে আমার ইউনিয়নের প্রতিটি হাট বাজার, রাস্তা ঘাটে মাইকিং করেছি। প্রায় ১০ হাজারের মতো মাস্ক বিতরন করেছি। এলাকার গরিব লোকজনের জন্য ব্যক্তিগতভাবে বিয়ে স্বাদিসহ মসজিদ মাদ্রাসায় সাহায্য সহায়ত তো রয়েছে।
চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আবদুর রহমান তার দায়ীত্বকালিন সময়ে বেশ কটি সংগঠন ও জাতীয় সংস্থা থেকে পুরস্কৃত হয়েছেন সমাজ সেবায় বিশেষ অবদানের জন্য।
তিনি জাতীয়ভাবে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান ও জেলা পর্যায়ে পরিবার পরিকল্পনা সন্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। এছাড়া জেলা ও উপজেলা প্রশাসন থেকে বিভিন্ন সন্মাননা পেয়েছেন।
চেয়ারম্যানের দায়িত্বের সময় ভালো লাগার ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, এলাকার লোকজন যখন তাদের কোনো কাজ নিয়ে আমার কাছে আসে তখন এবং তাদের কোনো কাজে সামান্যতম যদি কাজে লাগি তখন সে সব লোকজন যেভাবে দোয়া করে তখন খুব ভাল লাগে। নিজেকে সফল মনে হয়।
খারাপ লাগার ঘটনা সম্পর্কে বলেন, সারাদিন কাজ করে যখন রাতে ঘুমাতে যাই তখন গভির রাতে কেউ যদি তুচ্ছ ঘটনায় ফোন করে, তখন খুব খারাপ লাগে।
এবার নির্বাচন করবেন কি না ? তার জবাবে তিনি বলেন, হায়াতে যদি বেঁচে থাকি, আল্লাহ যদি কবুল করেন,তাহলে জনগনের মায়ায় আবারো নিবার্চন করবো ইনশা আল্লাহ। এছাড়া আমি যদি নির্বাচন না করি তা হলে উন্নয়নের গতি থাকবে না। আমার পরিকল্পনা মোতাবেক এখনো যে সব উন্নয়নমূলক কাজ বাকি আছে তার ধারাবাহিকতা থাকবে না।
তাছাড়া আমি যদি চেয়ারম্যান না থাকতাম তাহলে হয়তো এতো রাস্তা ঘাট, ব্রিজ কালর্ভাট, হতো না, আমি হলফ করে বলতে পারি গ্রামে দেন দরবারে জনসাধারনের কাছ থেকে একটি টাকা পয়সা নেয়নি। এ কথা কেউ বলতেও পারবে না।
চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আবদুর রহমান এলাকাবাসী সর্ম্পকে বলেন, এলাকার মানুষ অল্পতেই সন্তুষ্ঠ হয়। তারা আমার কাছে ভাল ব্যবহার চায়। টাকা পয়সা চায় না ।
চেয়ারম্যান দায়ীত্ব পালন করতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে কোন মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে কি না ? জানতে চাইলে তিনি বলেন, পারিবারের সবাই নিবার্চন করতে না করে। কারন নিবার্চনে টাকা লাগে। আমার ব্যক্তিগত ব্যাংক একাউন্টে কোন টাকা পয়সা জমা নেই। শিক্ষকতায় যা রোজগার করি তা খরচ করে ফেলি।
তাহলে সংসার চলে কিভাবে? তার জবাবে তিনি বলেন, আমি চেয়ারম্যান এর দায়িত্ব নিয়ে কোন বেতন-ভাতা নিইনি। বড় ছেলে চাকরি করে তার টাকায় সংসার চলে।
এলাকার একাধিক নারী-পুরুষ চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আবদুর রহমান সম্পর্কে বলেন, এমন চেয়ারম্যান পাওয়া ভাগ্যে ব্যাপার কারন আমাদের সুখে দুখে সব সময় তাকে পাই, আগের অনেক চেয়ারম্যানের বাড়িতে গিয়ে অপমানিত হয়েছি। কোন কথা বলতে পারি নি। অনেক চেয়ারম্যান দেন দরবার করে টাকা পয়সা নিতে। আর আমাদের এ চেয়ারম্যান এরকম কোন কথা শুনিনি। তার দরজা সব লোকের জন্য খোলা থাকে। আর এই করোনাকালিন সময়ে নিজের জীবনের মায়া না করে প্রতিদিন আমাদের এলাকায় আসতো মাইকিং করতো যাতে আমরা সচেতন হই মাস্ক পরি।
চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আবদুর রহমানের ব্যক্তিগত জীবনে স্ত্রী গোলজার বেগম গৃহীনি। বড় ছেলে মুহাম্মদ জুনাইদ ব্যাংকে চাকরি করেন। ছোট ছেলে মুহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম ইসলামী ইউনিভার্সিটির ছাত্র এবং দু'কন্যার বিয়ে হয়েছে।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 comments: