“আমার নামাজ, কুরবানী, হায়াত ও মৃত্যু সবকিছু আল্লাহর জন্য” : হাসপাতালের বেড থেকে আরমান মাহমুদ


হায়াত- মওত ও রিজিকের মালিক যে আল্লাহ তা খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করার সুযোগ হচ্ছে। অসুস্থতার কথা শুনে দেখতে আসা আত্বীয়-স্বজনরা তাদের সাথে নিয়ে আসা মাছ-মাংসের খাবার,ফল-মুল ও নানা সুস্বাদু খাবার চোখের সামনে পড়ে থাকলেও খেতে পারছিনা.! কারণ গত ৪ দিন ধরে ডাক্তারের বারণ শুধু খাবার না,পানিও খাওয়া যাবেনা। জানিনা আরো কতদিন রিজিক থেকে বঞ্চিত থাকবো.!

একদিকে যেমন সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে যাওয়া রোগীদের দেখে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখি অন্যদিকে আজরাইল (আঃ) আমার সামনে দাড়িয়ে প্রতিদিন আশেপাশের কাউকে না কাউকে নিয়ে যাচ্ছে আর আমাকে জানিয়ে দিচ্ছে যেকোন সময় তোমার কাছেও আসবো। এই লিখাটা লিখার সময় আমার ঠিক পেছনের সীটে আমার সমবয়সী একজন মারা গেল। যদিও আমি মৃত্যুর জন্য দৃঢ় প্রস্তুত। কারণ আমি বিস্বাস করি- কুল ইন্নি সালাতি ওয়ানুসিকি ওমাহয়ায়া ওমামাতা লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন:- আমার নামাজ, কুরবানী, হায়াত ও মৃত্যু সবকিছু আল্লাহর জন্য।

এখন আমার জন্য প্রতিটি সেকেন্ড খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখন নারী, গাড়ি, বাড়ি বা কোটি টাকার মালিক হওয়ার স্বপ্ন আমি দেখিনা আমি স্বপ্ন দেখি আরেকটা মিনিট, ঘন্টা, দিন বা সপ্তাহ বেঁচে থাকি। কারণ মৃত্যুর সাথে প্রতিটি সেকেন্ড লড়াই করে বেঁচে আছি। হঠাৎ এমন যন্ত্রণা শুরু হয় মনে হয় আমার জীবিত শরীর থেকে কেউ মাংস কেটে নিচ্ছে। তবে এই পরিস্থিতিতে আমি সর্বোচ্চ ধৈর্যশীল হই। ফ্রিতে গ্রহণ করা আল্লাহর অক্সিজেনকে মিস করছি খুব। এই একটা নেয়ামতের ঋণ আরো একশবার জন্মগ্রহন করে শুকর আদায় করলেও শোধ করতে পারবে না কোন মানুষ।

আমি ভালোবাসার সর্বোত্তম উদাহরণ দেখেছি আম্মু-আব্বুর কাছে যারা এ ৩-৪ দিন খেয়ে না খেয়ে দিনরাত আমার পাসে বসে আমার দেখাশোনা করছে। আমি প্রায়শ দেখি আমার মা-বাবা নিরবে কান্না করে আমাকে বুঝতে দেয়না, আমিও আমার যন্ত্রণাগুলো তাদের বুঝতে দিইনা। বারবার আল্লাহর কাছে তারা দোয়া করছে এই বলে: ও আল্লাহ আর পুয়ারে ভালা গরি দ, আর হায়াত্তিন আর পুয়ারি দিয়েনেও অইলিও আর পুয়ারে বাঁচায় দ,.! এ কথাগুলো পরিমাপ করার কোন যন্ত্র পৃথিবীতে নেই। এজন্য হইতো আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব তার জুমার এক আলোচনায় বলেছিল পৃথিবীর সমস্ত পীর-আওলিয়া এক পাল্লায় দিলে অন্য পাল্লায় মা-বাবাকে দিলে তাদের পায়েরও সমান হবে না। আমার পরিবারের সদস্যদের আহাজারি শুনে তাদের চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে আমার কিছুই হয়নি।

আমি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি আমার বন্ধু- বান্ধব,আত্বীয়-স্বজন, সাংগঠনিক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি যারা প্রতিনিয়ত খোঁজখবর ও বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। আপনাদের এ আন্তরিকতা আমাকে আরো বাঁচার অনুপ্রেরণা দিচ্ছে।
এ সময় স্বাস্থ্যখাত নিয়ে যে অভিজ্ঞাতা হয়েছে তা হল:- শুধু এম.বি.বি.এস পাশ করলেই যে ভালো ডাক্তার হবে তা না, অনেক সময় এরকম ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় অনেকের অকালে মৃত্যু হচ্ছে।( চকরিয়া সরকারি হাসপাতালে ০২-০৮-২০২১, আমিসহ বিকালের দিকে বেশ কজন রোগী ভার্তি হই আর পরেরদিন সকালে ডা: মাঈন উদ্দিন মুরশেদ আমি সহ অনেককে না দেখেই ছাড়পত্র দিয়ে বাড়িতে চলে যেতে বলে এবং আম্মু আরএমও কে জানালে সে আমাদের অবস্থা দেখে ভর্তি থাকতে বলে এবং পরের ৩ ঘন্টার মধ্যে আমার বেথা বেড়ে যায় ও আমাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়।) আমি একই পরিক্ষা তিন জায়গায় করেছি এবং তিনটা ডাক্তারকে দেখিয়েছি। ৩জনের মন্তব্য ৩ধরণের। শেষে ডা: উসমানুর রসিদ সাহেবের মাধ্যমে আল্ট্রাসনোগ্রাফী করালে আসল রোগ ধরা পড়ে। এবং সেটার ট্রীটমেন্ট নিচ্ছি। তাই আপনারা রোগীদের হাতুড়ি
ডাক্তার/ কবিরাজ/ বৈদ্যের কাছে না গিয়ে একজন অভিজ্ঞ ডাক্তার দেখাবেন।

আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে কোন রোগ সহজে নিজ থেকে তৈরি হয়না, আমাদের বদঅভ্যাস বা অবহেলার কারনে তৈরি হয়। তাই নিজের সাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিন, বিলাসী খাবার তথা ফাস্টফুড জাতীয় খাবার যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন।
বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে জীবনের অনেকটা সময় মানবিক কাজ এবং সাংস্কৃতিক চর্চা ও দুর্নীতি বিরোধী সামাজিক আন্দোলনসহ সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার কাজে ব্যয় করেছি। আমার সহযোদ্ধাদের খুব মিস করছি। আমি তাদের একজন হয়ে গর্ববোধ করি এবং প্রত্যাশা করি তাদের হাত ধরে পৃথিবীতে সুন্দর ও ন্যায়ের সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে। বেচে থাকলে জীবনের বাকি সময়টাও তাদের সাথে কাটাবো ইনশাআল্লাহ। বাংলাদেশের তরুণদের নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখি তাদের নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছি অনেকদিন ধরে। এ লিখাটার অন্যতম উদ্দেশ্যে আমার জীবনে ঘটে যাও এসব ঘটানোগুলো থেকে কেউ ভালো কিছু শিখতে পারলে এখানেই আমর সার্থকতা।

আমি জানি এ সময় দৃঢ় মনোবল ও আত্মবিশ্বাস খুব বেশি প্রয়োজন আর আমি সেটাই সর্বোচ্চ করার চেষ্টা করছি এবং এটিই আমাকে ৫০% বেঁচে থাকতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বেঁচে থাকলে আবারো দেখা হবে ইনশাআল্লাহ, অন্যথায় আল্লাহ যদি আমাকে কবুল করেন আপনাদের ছেড়ে চলে যাবো। সবাই দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন আর আমার জন্য দোয়া করবেন।

আরমান মাহমুদ
(আমার তেমন কোন পরিচয় নাই আমি নিম্নোক্ত বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছি)
সাংস্কৃতিক কর্মী, সংবাদকর্মী, সমাজকর্মী ও উদ্যোক্তা।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 comments: