তোমার মৃত্যুর খবরে বিলাপ করে কাউকে কাঁদতে দেইনি; আমরা সুন্নাহ অনুসরণ করেছি

প্রফেসর হাসমত আলী: 


আল্লাহর সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত। হাজারো স্মৃতির জীবন্ত এলবাম খুলে দিয়ে মহান রবের কাছে ফিরে গেল আমার কলিজার টুকরো ভাগীনা আসিফ ইকবাল।

কোন কথাতেই না বলতে না পারা ছেলেটা এখন আল্লাহর জিম্মায়। আর ফিরবেনা।

তোমার সরল চেহারাটা আমাদের চোখে ভেসে বেড়াচ্ছে, মামা। তোমার রূঢ় শাসক এই অভাগা মামাটি আর তোমাকে আসিফ বলে খবরদারির ডাক দিবেনা? ওইটা কেন করেছ, ওর সাথে কেন বের হয়েছ বলে বকা দিবেনা? তোমাকে সময়ে অসময়ে এটা কর, ওটা করোনা বলে বিরক্ত করবেনা।

মামা! তোমার মরহুমা নানী বলতো মোটরসাইকেল মানে মউতের সাইকেল। আসলেই ত! ওটাতেই তোমার মউত আসল। 

মামা হিসেবে যে ভালবাসা শ্রদ্ধা পাবার হকদার ছিলাম তার চেয়ে হাজার গুণ বেশি তুমি দিয়েছ। ভাগীনা হিসেবে মামার যা দেয়ার ছিল তার. ০০১% ও দিতে পারিনি।

মামা 

 বড়দের সম্মান করা ও ছোটদের স্নেহ করার  প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এক বিরল গুণ ছিল তোমার মধ্যে। তুমি ছিলে সবার প্রিয় আসিফ ভাইয়া, আসিফ। 

তুমি আলেমদের কত সম্মান করতে তা পাশের মসজিদের খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন সাহেবরা স্বাক্ষী। রোজার সময় মসজিদ কমিটির দেয়া দায়িত্ব পালন ছিল আমার দেখায় চক্ষু শান্তকারী। 

রোগীকে রক্ত দিয়ে, রোগীর পাশে থেকে সেবা করে তুমি জীবন্ত এখনো। আমার নয়দিন হাসপাতালে থাকার সময় খাবার ও ঔষধ সময়মতো পৌঁছে দেয়ার মহান দায়িত্ব পালন করে আমাকে ঋণী করে ফেলেছ।

তোমার মা  বাবা ভাই বোন, দাদী, চাচা চাচী সবার কাছে তুমি ছিলে কলিজা। সকলের হৃদয়পটে তুমি জায়গা করে নিলে। প্রতিবেশি সবাই তোমার জন্য বুক ফেটে কান্না করছে। তোমাকে খুবই মিস করছে।

আত্মীয় স্বজন পাড়া পড়শী বন্ধুবান্ধব শুভাকাঙ্ক্ষী সবাই তোমার ভালবাসায় সিক্ত ছিল আর তুমি সবার ভালবাসায় সিক্ত হলে।

তুমি ইসলামের জন্য বিশাল খেদমত করেছ তার সাক্ষী আমি এবং অনেকে। ইসলামের বিজয় ছিল তোমার হৃদয়ের চাওয়া সেটাত আমরা জানতাম।

আসিফ, 

এই গরু বাজারই তোমার শেষ বাজার ছিল তা আমি তো জানতামনা। তোমার পছন্দ হয়নি বলে এক বাজার থেকে আরেক বাজারে চলে গিয়েছিলাম। তোমার মনমতো দুপুরের খাবার খাওয়াতে পারিনি। ঘরের খাবারই সেরা- তোমার মুখে কথাটা শুনে কলিজা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল। কুরবানীর সময় তুমি ধরেছ মাথা আর আমি ধরেছি দা। সারাদিন কাজ করে একটু বের হয়েছ তাই মানা করিনি। 

আসিফ, 

মামা ডাক দিলে চট্টগ্রাম ছুটে যেতে।আর কি যাবেনা? মামার কোন আদেশে না বলনি কখনো। তোমার মামী, মামাতো ভাই বোনেরা তোমাকে কত ভালবাসতো তা তুমি উপলব্ধি করেছিলে?

জানাজায় হাজারো মানুষের ঢল নেমেছিল। সবাই তোমার ভালবাসায় সিক্ত হয়েছিল। তোমার জন্য সবাই কাঁদছে। দোয়া করছে। 

তোমার মৃত্যুর খবর পেয়ে আমরা সুন্নাহ অনুসরণ করেছি। বিলাপ করে কাউকে কাঁদতে দেইনি। আমরা তোমাকে হারানোর ব্যথা চোখের নীরব জল দিয়েই প্রকাশ করছি। আমাদের চোখের পানির প্রতিটা ফোটাতেই তোমার মুক্তি ও শান্তির জন্য দোয়া।

তোমার মৃত্যুতে আমাদের কোন অভিযোগ নেই। আমরা আল্লাহর সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ। তুমি যেখানে গিয়েছ, আমরাও সেখানে আসবই। তোমার মতো ভালবাসাপূর্ণ রাজকীয় বিদায় আমরা পাবো কিনা জানিনা। তোমার জন্য দোয়ার হাত তুলে তোমারই পিতা, মা, ভাই বোন সহ হাজারো নারী পুরুষ।  এটা তোমার সৌভাগ্য।

আমি বড় গোনাহগার। তবুও আমি মহান আল্লাহর কাছে আজীবন ফরিয়াদ করবোঃ

আল্লাহ যেন তোমার নেক আমল কবুল করে নেন। তোমার কৃত গোনাহখাতা মাফ করে দেন। তোমার কবরকে জান্নাতুল ফেরদৌসের নেয়ামত দ্বারা পরিপূর্ণ করে দেন। তোমার কবরকে প্রশস্ত করে দেন। তোমার সাথে জান্নাতে আমাদের সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দেন।


লেখক: নিহতের মামা প্রফেসর হাসমত আলী 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। 

উল্লেখ্য, ঈদেরদিন বুধবার (২১জুলাই) কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভে মোটর সাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২জন আরোহী মারা যায়। তন্মধ্যে একজনের নাম কফিল উদ্দিন রিফাত। সে পাহাড়তলীর বাসিন্দা। অপরজনের নাম আসিফ ইকবাল চৌধুরী। সে শহরের ১২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 comments: