স্কুল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিন -ইউনিসেফ-ইউনেস্কো

অনলাইন ডেস্ক : 

করোনা মহামারির কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বন্ধ হয়ে যাওয়া স্কুল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের দুই সংস্থা ইউনিসেফ এবং ইউনেস্কো। টিকার জন্য অপেক্ষায় না থেকে অবিলম্বে স্কুল খুলে দেওয়ার এই আহ্বান গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে সংস্থা দু’টি। করোনা মহামারির কারণে বিশ্বজুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাব্যবস্থা মেরামতে করণীয় নির্ধারণে মঙ্গলবার জাতিসংঘের উদ্যোগে বৈশ্বিক শিক্ষা বৈঠক নামে একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ দুই সংস্থা ইউনিসেফ ও ইউনেস্কোও সেই বৈঠকে অংশ নেবে। তার আগের দিন সোমবার এক বিবৃতির মাধ্যমে এই ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করল সংস্থা দু’টি।

ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর এবং ইউনেস্কোর মহাপরিচালক অড্রে অজৌলে স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে গত ১৮ মাসে বৈশ্বিক শিক্ষাব্যবস্থা তছনছ হয়ে গেছে এবং এর প্রধান শিকার হয়েছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের কোটি কোটি শিশু। আমাদের হাতে থাকা তথ্য অনুযায়ী, মহামারির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৯টি দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল সম্পূর্ণ বন্ধ আছে এবং এর ফলে ক্ষতির শিকার হচ্ছে এসব দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে অধ্যয়নরত ১৫ কোটি ৬০ লাখেরও বেশি শিশু।’

যেসব দেশে এখন পর্যন্ত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ আছে, সেসব দেশের সরকারের সমালোচনা করে ইউনিসেফ ও ইউনেস্কো বলেছে, ‘গত ১৮ মাসে বিশ্বে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি কখনই একই রকম থাকেনি; কখনও উন্নতি হয়েছে, কখনও বা অবনতি। কিন্তু সেই শুরু থেকে যেসব দেশ সংক্রমণ বিস্তারের অজুহাতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল, তাদের অনেকেই এখন পর্যন্ত সেই নির্দেশ প্রত্যাহার করে নেয়নি।’

‘এই দেশগুলোর সরকারের মনোভাব এমনÑ যেদিন করোনায় দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা শূন্যের কোটায় নেমে আসবে, সেদিন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলসমূহ খোলা হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, এসব দেশের পানশালা ও রেস্তোঁরাসমূহ খুলে দেওয়া হয়েছে; কিন্তু স্কুল বন্ধ আছে।’

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘স্কুলগুলো বন্ধ ঘোষণা করা উচিত ছিল সবার শেষে এবং খোলা উচিত ছিল সবার আগে। অথচ জতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্রগুলোর অনেকেই করেছে ঠিক তার উল্টো। এ রকম চিত্র একদমই কাক্সিক্ষত নয়।’

গত ১৮ মাস ধরে স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া, মানসিক যন্ত্রণা ও বিষন্নতা, সহিংসতা-যৌনতা সংক্রান্ত অপরাধে জড়িয়ে পড়া কিংবা তার শিকার, সামাজিক দক্ষতার উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হওয়াসহ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষর্থীদের যেসব ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা কখনই পূরণ হবে না উল্লেখ করে বিবৃতিতে জাতিসংঘের এই দুই সংস্থা বলেছে, ‘বিশেষ করে উন্নয়নশীল এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোর অবস্থা ভয়াবহ। এসব দেশের বেশিরভাগ শিশুর কাছে প্রযুক্তি উপকরণ না থাকায় গত ১৮ মাসে তারা শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন এবং এর ফলে এসব দেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে শিশুশ্রমের হার।’

বিবৃতিতে তারা বলেছেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অভিভাবকরাও। শিশুদের বাড়িতে রাখা ও তাদের পড়াশোনার দেখভাল করার জন্য অনেকেই চাকরি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন।’

‘সংক্রমণ কবে শূন্যের কোটায় নামবে, সেজন্য আর অপেক্ষায় থাকা যায় না। এটা প্রমাণিত যে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো সংক্রমণ ছড়াতে মুখ্য ভূমিকা রাখছে না। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উপযুক্ত কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে স্কুলগুলোতে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকি সামাল দেওয়া সম্ভব। স্কুল খুলে দেওয়া বা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ঝুঁকি বিশ্লেষণ করে এবং যে কমিউনিটিতে স্কুল অবস্থিত, সেখানকার মহামারি পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে।’

এ পরিস্থিতিতে স্কুল খুলে দেওয়ার জন্য ‘সব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা যায় না’ মন্তব্য করে বিবৃতিতে বলা হয়, স্কুলে প্রবেশের আগে টিকাদান বাধ্যতামূলক না করে সব স্কুলের উচিত যত দ্রুত সম্ভব ক্লাসে এসে শিক্ষার্থীরা যাতে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে সেই ব্যবস্থা করা।

‘স্কুল বন্ধ রেখে এখন কী লাভ হচ্ছে, তাই যেখানে স্পষ্ট নয়, সেখানে আমাদের ভবিষ্যৎকে কার্যত জিম্মি করে ফেলা হচ্ছে। অগ্রাধিকার নির্ধারণের ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই আরও বিবেচক হতে হবে। আমরা নিরাপদে স্কুলগুলো আবার খুলে দিতে পারি এবং আমাদের অবশ্যই তা করা উচিত। (১২ জুলাই, ইউনিসেফ ডট ওআরজি)


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 comments: