করোনাভাইরাস পরিস্থিতি: দৈনিক শনাক্তের হার ফের ১৫ শতাংশের বেশি

অনলাইন ডেস্ক: 


পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্ত রোগীর হার ৬ শতাংশে নেমে আসায় মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে অনেকে আশা দেখতে শুরু করেছিলেন, ভেবেছিলেন করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ বাংলাদেশ হয়ত পেরিয়ে এসেছে।

কিন্তু এ ভাইরাসের অতি সংক্রামক ডেল্টা ধরনের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন এক মাসের মাথায় দৈনিক শনাক্ত রোগীর হার নিয়ে গেছে ফের ১৫ শতাংশের উপরে।  ‍

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, বুধবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৫১৩টি ল্যাবে ২৩ হাজার ৮০৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।

তাতে সংক্রমণ ধরা পড়েছে ৩ হাজার ৯৫৬ জনের মধ্যে, যা প্রায় আট সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ। দৈনিক শনাক্ত রোগীর হার দাঁড়াচ্ছে ১৬ শতাংশের বেশি। 

গতবছর মার্চে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর গত ১৫ মাসে পরীক্ষার বিপরীতে গড় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৪১ শতাংশ।  দৈনিক শনাক্তের হার গত তিন দিন ধরেই তার চেয়ে বেশি থাকছে।

শনাক্তের পারে পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি খারাপ খুলনা বিভাগে, সেখানে দৈনিক এই হার থাকছে ৪০ শতাংশের বেশি; রাজশাহীতে থাকছে ২০ শতাংশের কাছকাছি।

সংক্রমণ বাড়ার মানে হল মৃত্যুও বাড়বে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত এক দিনে ৬০ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে, যা দেড় মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সব মিলিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে দেশে মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা অবশ্য মনে করেন, নমুনা পরীক্ষা কম হওয়ায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর অনেক সংখ্যা সরকারের খাতায় আসছে না।

গত এক দিনে সারা দেশে ২৪ হাজারের কম নমুনা পরীক্ষা হয়েছে, যেখানে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়েরে মধ্যে ১২ এপ্রিল প্রায় ৩৫ হাজার নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল।

দেশে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নমুনা পরীক্ষার ল্যাব বাড়লেও পরীক্ষার সংখ্যা সে অনুযায়ী বাড়েনি। গত দেড় বছরে সারা দেশে মাত্র ৬২ লাখ ৪২ হাজার ৭৮৬টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে যেখানে কেবল ঢাকার জনসংখ্যাই ২ কোটির বেশি।

গত বছরের মার্চে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর ৬ এপ্রিল দৈনিক শনাক্ত রোগীর হার ৫ শতাংশের ওপরে উঠে গিয়েছিল। মের শেষ দিক থেকে অগাস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত তা ২০ শতাংশের উপরেই থাকে। এর মধ্যে ১২ জুলাই তা ৩৩.০৪ শতাংশে পৌঁছায়, যা এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ।

সংক্রমণের প্রথম ঢেউ সামলে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা তিনশর ঘরে নেমে এসেছিল গত ফেব্রুয়ারিতে। জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে প্রায় দুই মাস দৈনিক শনাক্তের হার ছিল ৫ শতাংশের নিচে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী পরপর দুই সপ্তাহ শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়। সে কারণে বিশেষজ্ঞরাও তখন আশা দেখতে শুরু করেছিলেন।

তাছাড়া ফেব্রুয়ারির শুরুতে দেশে গণটিকাদান শুরু হয়। ফলে সেটাও করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহস যোগাচ্ছিল।

কিন্তু মার্চে সংক্রমণ আবার বাড়তে শুরু করলে পরিস্থিতি দ্রুত খারাপের দিকে যায়। এপ্রিলের শুরুতে হাসপাতালে শয্যার জন্য শুরু হয় হাহাকার। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে ফের কঠোর লকডাউনের বিধিনিষেধ ফিরিয়ে আনতে হয়।

সে সময় মাত্র ১৬ দিনে এক লাখ মানুষের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। ৭ এপ্রিল রেকর্ড ৭ হাজার ৬২৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। ১৫ দিনেই এক হাজার কোভিড-১৯ রোগীর মৃত্যু ঘটে, ১৯ এপ্রিল রেকর্ড ১১২ জনের মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

ওই সময়টাকে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে দ্বিতীয় ঢেউ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।

সেই ঢেউয়ের ধাক্কায় যেমন দ্রুত গতিতে শনাক্ত ও মৃত্যুর গ্রাফ উঁচু থেকে উঁচুতে উঠছিল, এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে একইরকম দ্রুততায় তা নেমে আসতে শুরু করে।

মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে মোটামুটি দুই সপ্তাহ দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দেড় হাজারের ভেতরেই ওঠানামা করছিল। তাতে সরকারের মন্ত্রীরাও দ্বিতীয় ঢেউ সামলে ওঠার কথা বলতে শুরু করেছিলেন। 

কিন্তু জুনের শুরু থেকে দৈনিক শনাক্ত রোগী আবার ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। দেড় মাস পর সোমবার দেশে আবারও এক দিনে তিন হাজারের বেশি রোগী শনাক্তের খবর আসে।     


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 comments: